কথায় আছে ‘মিষ্টি বাঙালির সৃষ্টি’। আর এই মিষ্টি ছাড়া বাঙালির জীবন অসম্পূর্ণ। আহারে বাহারে ‘যেন তেন প্রকারেণ’ মিষ্টি আমাদের চাই-ই চাই। যুগ যুগ ধরে এই বিশেষ খাদ্য বাঙালির জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে। ‘আজ একটু মিষ্টিমুখ হয়ে যাক’ এ কথা যেন আমাদের আবেগ। এ স্বাদ যে সহজে ভোলবার নয়।
বারাসাতের বুকে অবস্থিত এমনই এক মিষ্টির দোকান যা ১৫৬ বছর ধরে বারাসাতবাসীকে ‘মিষ্টি মুখ’ করিয়ে চলেছ। শুধু বারাসাতবাসীই নন, এই দোকানে মিষ্টিমুখ করতে আসতেন নামীদামী মানুষজন। বারাসাত দক্ষিণপাড়ার মোড়ে যশোর রোডের উপর অবস্থিত এই ছোট্ট একটি দোকান ‘রাধা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’। ১৫৬ বছর ধরে সে বাঙালির ঐতিহ্যকে আগলে রেখেছে। বারাসাতের ইতিহাসে ওতোপ্রোত ভাবে জড়িয়ে এই নাম। একসময় এই দোকানে মহানায়ক উত্তম কুমার থেকে শুরু করে বাংলা চলচিত্র জগতের মহারথীরা এসে পূরণ করতেন রসনার বাসনা। বারাসাতের ওপর দিয়ে গেলে এই দোকানে একবার হলেও আসতেন কিশোর কুমার। মিষ্টি মুখ করতেন, দোকানের মালিকের সাথে খোশগল্প করে তারপর আবার নিজ গন্তব্যে রওনা দিতেন।
বাঙালির প্রিয় রসোগোল্লা থেকে শুরু করে রসমালাই; কমলাভোগ থেকে সীতাভোগ! সবই পাওয়া যায় এখানে। এছাড়াও কালো জাম, গোলাপ জাম, সন্দেশ, কালাকাঁদ, বরফি তো আছেই। এই দোকানের নানান রকমের, নানান স্বাদের মিষ্টি আজও ভুলিয়ে রেখেছে বারাসাতবাসীকে।
এত বছরের ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপথ কিন্তু মধুর ছিলনা। এই ঐতিহ্যময় যাত্রাপথের সাথে জড়িয়ে আছে এক বিরাট বড় দুর্ঘটনা। সালটা ছিল ২০২০-এর জুন মাস। এক বড় অগ্নিকান্ডে দোকানটির বেশিরভাগ অংশ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। দোকানের কর্ণধার ইন্দ্রজিৎ দাসের কথায়, সেই অগ্নিকান্ডের ফলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল দোকানের। সেই ধ্বংসাবশেষ থেকে নতুনভাবে ঘুরে দাড়াতে লেগেছিল বেশ কিছুটা সময়। সব বিপদ সামাল দিয়ে নতুন সাজে ফের সেজে উঠেছে বারাসাতের ঐতিহ্য ‘রাধা মিষ্টান্ন ভান্ডার’। যুগ যুগ ধরে চলতে থাকুক এই দোকান। নতুন প্রজন্মের সাথে বাঙালির ঐতিহ্যের মেলবন্ধন ঘটাক রাধা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। দিকে দিকে ছড়িয়ে যাক এই নাম।
Discussion about this post