মিষ্টির নাম শুনলেই বেশিরভাগ বাঙালির জিভের ডগায় জলটি জমে যায়। নানা স্বাদের মিষ্টির তারতম্যটা বোধহয়, বাংলার মতো অন্যত্র মিলবে না। এবার যে মিষ্টিটার নাম নিতে চলেছি, দেখুন দেখি লোভের পারদটা একটু বাড়ে কিনা। দুধকে ঘন থেকে ঘনতম করে সর তুলে বানানো হয় এই সুস্বাদু মিষ্টিটি। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, রাবড়ির কথাই বলছি। কলকাতার বড় বড় মিষ্টির দোকানে নিঃসন্দেহে এটি পেয়ে যাবেন। কিন্তু হাতে যদি একটু সময় পান, তবে ঘুরেই আসুন না একবার রাবড়ির আঁতুড়ঘরে।
হুগলির চণ্ডীতলা ব্লকের প্রত্যন্ত এক গ্রাম হল আঁইয়া। তবে এর পরিচিত নামটি হল, ‘রাবড়ি গ্রাম’। এখানের প্রতি বাড়িতেই অল্পবিস্তর রাবড়ি প্রস্তুতি পর্ব চলে রোজ। ভোর থেকেই প্রতি বাড়িতে বড় বড় কড়া চাপে আগুনের রগরগে আঁচে। শুরু হয় ৮০-৯০ লিটার দুধে জ্বাল দেওয়া। তবে একটা কড়ায় ৭লিটারের বেশি দুধ নেওয়া সম্ভব হয় না। এরপর অপেক্ষা চলে দুধের ঘনত্ব বাড়ানোর। দুধের সর দুধ থেকে চেঁছে কড়ার গায়ে জমা করা হতে থাকে। পুরু সরে ভরে ওঠে কড়াটি। দুধের আয়তন শেষ অবধি দুই থেকে আড়াই লিটারে পৌঁছায়। ততক্ষন অবধি আঁচে হাতপাখা দিয়েই হাওয়া দেওয়া হয়। তাই সকাল ১১টার আগে টাটকা রাবড়ি পাওয়া মুশকিল। এই গ্রামেরই লাগোয়া লক্ষণপুর গ্রাম থেকে আসে প্রতিদিনের দুধ। এভাবেই চলে ‘রাবড়ি গ্রামের’ বাসিন্দাদের নিত্যদিনের সংসার।
এখানে ৫০ থেকে ৬০ টি পরিবার। সবাই এই কাজটিকেই পেশা করে রোজকার করেন। শীতের মরশুমে গেলে পেয়ে যাবেন গুড়ের রাবড়ির স্বাদটিও। এছাড়া এখানের সরভাজাও সর্বদাই বাড়ন্ত। এবার চলুন দরদামগুলো একটু জেনে নেওয়া যাক। প্রতি পিস সরভাজা এখানে ১০ টাকা। রাবড়ি বিক্রি হয় প্রতি কেজিতে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। আর গুড়ের রাবড়িটি প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় পাবেন। এই রাবড়ি নিয়েই কলকাতার অনেক দোকানে রাবড়ির রমরমা ব্যবসাটি চলে। তাই আর অপেক্ষা কিসের! এই বসন্তেরই কোনো এক অগোছালো দিনে বেরিয়ে পড়ুন রাবড়ি গ্রামের উদ্দেশ্যে। উপভোগ করুন গ্রাম বাংলার মানুষের ভালোবাসা আর মন ভরে স্বাদ নিন খাঁটি রাবড়ির।
চিত্র ঋণ – সুমি ভট্টাচার্য্য
Discussion about this post