আজ রবি ঠাকুরকে নিয়ে ‘গল্প হলেও সত্যি’ একটি ঘটনা বলা যাক। কখনো তিনি ভানুসিংহ কখনো বা আন্নাকালী পাকড়াশী ছদ্মানামে ধরা দিলেও রবি ঠাকুর বাংলা সাহিত্যপ্রেমীদের প্রথম প্রেম। বাংলা সাহিত্যেকে যিনি দিয়ে গিয়েছেন এক অপূর্ব লেখনীর ভান্ডার। তাঁর লেখার কলমের ধার আমাদের মনে কেটে গেছে এক চিরস্থায়ী দাগ। কলম হলো একটি লেখকের সব থেকে বড়ো অস্ত্র। তাই সব লেখকেরই প্রিয় কিছু কলম থাকে। আর এই কলম নিয়েই ঘটে গেল একটি ঘটনা। ঘটনা এত দূর গিয়ে পৌঁছালো যে আদালত থেকে রীতিমতো সমন পাঠানো হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে।
তবে চমকে যাওয়ার মতোই ঘটনা। তবে ওই যে ‘গল্প হলেও সত্যি’! আদালতে সমন তাও আবার কবি গুরুর নামে। তবে এর পিছনের ঘটনা জানা যাক। রবি ঠাকুর একদিন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সন্ধ্যা আসরে হঠাৎই জানালেন যে তিনি নাকি আর লেখা লিখে উঠতে পারবেন না। সন্ধ্যা আসর তখন জমে উঠেছে। উপস্থিত রয়েছেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মণিলাল গাঙ্গুলী, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়। সৌরীন্দ্রমোহন ছিলেন কবি গুরুর অত্যন্ত স্নেহের পাত্র। তিনি ছিলেন পুলিশ কোর্টের উকিল। কবি গুরুর কাছে এমন কথা শুনে সকলেই একপ্রকার হতবাক। তাঁকে ঘিরে সবাই এবার প্রশ্ন করলে জানা গেল যে তাঁর অতি প্রিয় লেখার ঝর্না কলম হারিয়ে গিয়েছে। এই নিয়েই ঘটলো মজার ঘটনাটি।
এই ঘটনার কয়েক মাস পর জানা গেল যে তাঁর প্রিয় কলমটি চুরি গিয়েছিল, হারিয়ে যায় নি। আর এই কলমের শনাক্তকরনের জন্যই এই তলব। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঝুট-ঝামেলার মানুষ না। সে তাঁদের এক পুরনো ভৃত্যের হাত দিয়ে সৌরীন্দ্রমোহনকে খবর পাঠান যে তিনি আদালতে আসতে পারবেন না। তাঁকে অচিরেই তাই সমন পাঠানো বন্ধ হোক। অগত্যা সৌরীন্দ্রমোহন আর কী করবে উপায় না পেয়ে নিজেই গেলেন থার্ড প্রেসিডেন্ট মেজিসট্রেটের কাছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুজ্জামান খাঁ যিআএকাধারে এক বিরাট সাহিত্য প্রেমিক ছিলেন, তিনিই অবশেষে সাহায্য করলেন সৌরীন্দ্রমোহনকে। অতঃপর ব্যবস্থা করে ঠাকুরবাড়ির পুরনো ভৃত্যকে দিয়েই কলমটি শনাক্ত করানো হল।
Discussion about this post