একটি মাত্র পরিবার। তার জন্য গড়ে উঠেছিল আস্ত এক দেশ! তার আইন-কানুন, পাসপোর্ট-ভিসা, স্ট্যাম্প, মুদ্রা এমনকি জাতীয় পতাকাও ছিল অন্য দেশের থেকে আলাদা। অস্ট্রেলিয়ার অদূরে অবস্থিত ক্ষুদ্র সেই দেশটির নাম ‘প্রিন্সিপালিটি অফ হাট রিভার’। দেশটিকে গড়ে তোলা হয়েছিল সম্পূর্ণ একক তাগিদেই। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে রাজতন্ত্রও চলেছে সে দেশে। সম্প্রতি করোনার প্রকোপে বিলুপ্তি ঘটল সে দেশেরই। অবসান ঘটল পঞ্চাশ বছরের একচ্ছত্র রাজত্বেরও। অস্ট্রেলিয়া সরকারই শেষ পর্যন্ত কিনে নিল দেশটিকে।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2020/08/118087361_3305525163006163_1870864951587556760_n.jpg)
অস্ট্রেলিয়া থেকে মাত্র ৫০০ কিলোমিটার পথ দূরে অবস্থিত ছিল সে দেশ। আয়তন ছিল মাত্র ৭৫ বর্গ কিলোমিটার। এই ক্ষুদ্র আয়তন নিয়েই প্রিন্সিপালিটি অফ হাট রিভার হয়ে উঠেছিল স্বাধীন, স্বতন্ত্র একটি দেশ। হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া থেকে সম্পূর্ণ রূপেই বিচ্ছিন্ন। কীভাবে? তার পিছনেও রয়েছে ছোট্ট এক গল্প।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2020/08/118121770_2892622507510843_3763552817030058974_n.jpg)
১৯৬৯ সালে অস্ট্রেলিয়া সরকার একটি আইন বের করে। তাতে বলা হয়েছিল, কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত জমির পরিমাণ যেন কিছুতেই ১০০ একরের না হয়৷ তার বেশি হলেই সেটি বাজেয়াপ্ত হবে। এই বিলের কথা শুনে তখন বেশ মুশকিলে পড়লেন অস্ট্রেলিয়ারই এক বাসিন্দা লিওনার্দো ক্যাসলি। তাঁর ব্যক্তিগত জমির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৩ হাজার একর। অথচ তাঁর মত সাধারণ নাগরিকের পক্ষে বিলের বিরোধিতা করাও সম্ভব নয়। তিনি তখন নিজেই নিলেন এক সিদ্ধান্ত। অস্ট্রেলিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেই গড়ে তুলবেন অন্য একটি স্বাধীন দেশ।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2020/08/118083164_593920344633970_5750446898267367352_n.jpg)
যেমন ভাবা তেমনই কাজ! অস্ট্রেলিয়া থেকে অদূরেই নিজের পরিবারকে নিয়েই গড়ে তুললেন প্রিন্সিপালিটি অফ হাট রিভার। যে দেশে ছিল গোলাপি রঙের বিচ এবং মন ভোলানো এক সৌন্দর্য্য। সারা পৃথিবী থেকেই নাম মাত্র টাকায় ভিসা পাওয়া যেত সে দেশের। ভিড় করতেন বহু পর্যটকও। লিওনার্দো নিজেকে বলতেন প্রিন্স। দীর্ঘ বেশ কিছু বছর ধরে তিনি নিজেই চালিয়েছেন রাজকার্য। বিশ্বের ১০টি অন্যান্য দেশে দফতর অফিসও ছিল সে দেশটির। অবশেষে ২০১৯ সালে তাঁর মৃত্যু হলে শাসন ভার আসে ছেলে গ্র্যামি ক্যাসলির হাতে।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2020/08/118057506_786361528777766_5678087131661782674_n.jpg)
ছেলের হাতেই বেশ চলছিল সে দেশের রাজত্ব। তবে চলতি বছরে হঠাৎই ঘটে ছন্দপতন! হাট রিভারের ওপরেও এসে পড়ে করোনার নেতিবাচক প্রভাব। প্রায় ২.১৫ মিলিয়ন ট্যাক্সের বোঝা মাথায় চাপে সে দেশের। উপায় না দেখে শেষমেশ অস্ট্রেলিয়ার কাছেই আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় গ্র্যামি ক্যাসলি। অস্ট্রেলিয়া সরকার তৎক্ষনাৎ দেশটিকে কিনে নিতে তৎপরও হয়। প্রিন্সিপালিটি অফ হাট রিভারকে, অস্ট্রেলিয়ান সরকার যদিও কোনইদিনই কোনও স্বীকৃতি দেয়নি। তবে মাত্র তিরিশ জন বাসিন্দা নিয়েই এতদিন বেশ স্বতন্ত্র ভাবেই চলছিল সে দেশের রাজত্ব। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পর একমাত্র করোনার কারণেই শেষমেশ বিলুপ্তি ঘটল পৃথিবীর সবথেকে ক্ষুদ্র, স্বাধীন সে দেশটির। শেষ হল সে দেশের স্বতন্ত্রতার এক অধ্যায়।
Discussion about this post