বাঙালির হেঁশেলে মাছের উপস্থিতি ঠিক তেমনই যেমন পুলিশের গায়ে উর্দি। বাঙালির মৎস্যপ্রীতি জগৎ বিখ্যাত। ‘চর্যাপদ’ থেকে ‘চন্ডিমঙ্গল’- বঙ্গদেশের মাছের রকমারি রান্নার উল্লেখ আছে বহু গ্রন্থে। সুদীর্ঘ মৎস্য-তালিকায় যে দুটি মাছ বাঙালির অত্যন্ত প্ৰিয় সেগুলি হলো ইলিশ আর চিংড়ি। ইলিশের মনকাড়া স্বাদের সত্যিটা এক বাক্যে মেনে নিলেও পদের বৈচিত্রে চিংড়ি কিন্তু মাইল খানিক এগিয়ে। কালিয়া, ভুনা, দো-পেঁয়াজা, কোর্মা, মালাইকারি সহ অজস্র পদ বিভিন্ন তরকারির যুগলবন্দীতে তৈরী করা যায় সহজেই। কাঁটার ঝক্কি না থাকায় চিংড়ি শিশুমহলেও বেশ জনপ্রিয়। তাই আজ আপনাদের জন্য রইল চিংড়ির এমন একটা পদ যা রাজকীয় পাকশালা থেকে সরাসরি আমদানি করা। ‘চিংড়ি মাছের মোলি’ নামক এই রান্নার পদ্ধতি লিখেছেন স্বয়ং কোচবিহার রাজকন্যা ও জয়পুরের রাজমাতা গায়ত্রী দেবী।
চিংড়ি মাছের মোলি যতই রাজকীয় রান্না হোক, উপকরণ ও পদ্ধতি কিন্তু বড় সহজ সরল। আসুন দেখে নেওয়া যাক এই দুর্লভ পদটি রান্না করতে আমাদের কী কী উপকরণ লাগবে। মাঝারি সাইজের বাগদা চিংড়ি ১০-১২টি, ভিনিগারে ভেজানো আদা লম্বা করে কাটা, ২টো মাঝারি সাইজের পেঁয়াজ কুচি, নারকেলের দুধ ৪০০ মিলি, ১ টেবিল চামচ রসুন বাটা, ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো, তিনটে লম্বা কাটা বীজ বের করা কাঁচা লঙ্কা, নুন আন্দাজ মতো ও তিন টেবিল চামচ ঘি।
এবার আসা যাক চিংড়ি মাছের মোলি তৈরী করার পদ্ধতিতে। একটা প্যানে তিন চামচ ঘি গরম করে কুচোনো পেঁয়াজ গোলাপি হওয়া অবধি ভেজে নিতে হবে। এরপর দিতে হবে রসুন বাটা। রসুনের কাঁচা ভাবটা মিলিয়ে গেলে দিতে হবে হলুদ গুঁড়ো এবং ভিনিগারে ভেজানো লম্বা করে কাটা আদা। এরপর দিতে হবে সরু করে কাটা বীজহীন কাঁচা লঙ্কা। ৫০ মিলির মতো নারকেলের দুধ নিয়ে বাকিটা হাতের কাছে পরবর্তী পর্যায়ের জন্য রেখে দিতে হবে। এরপর মিশ্রণটি ঘন হওয়া অবধি ২-৩ মিনিট খুন্তি দিয়ে নাড়তে হবে। শুকিয়ে এলে মিশ্রণটি ঢেলে দিতে হবে অবশিষ্ট নারকেলের দুধ। মিশিয়ে দিতে হবে পরিমাণ মতো নুন। মাঝারি থেকে নিচু আঁচে গোটা ঝোল রান্না করতে হবে ঢাকনা দিয়ে বার কয়েক ফুটে ওঠা অবধি। সময় দিতে হবে ১০ থেকে ১২ মিনিট। এরপর চিংড়ি মাছগুলো ঝোলে ছেড়ে সময় নিতে হবে মাত্র ৩-৪ মিনিট। চিংড়ি মাছগুলো নরম হয়ে এলেই পাত্রে ঢেলে নিন। আপনাদের চিংড়ি মাছের মোলি পরিবেশনের জন্য তৈরী।
Discussion about this post