মিষ্টির রসে টইটম্বুর চিরকাল এই বাংলা। আর মিষ্টি প্রস্তুতির হাজারো প্রণালী বাংলার ইতিউতিতে ছড়িয়ে। নাম না জানা গ্রামের অলিগলিতে রয়েছে নানান মিষ্টির অজানা ইতিহাস। সন্দেশ মিহিদানা রসগোল্লা রসমালাইয়ের সুস্বাদের মায়াজালে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আজও বাঙালির হৃদমাঝারটি। আর এই মিষ্টির রসের ধারায় মজে রয়েছে এপার ওপার দুই বাংলাই। চলুন তবে তেমনই এক মিষ্টির অচেনা কিছু গল্প জেনে নিই।
যশোরথ নামের একজন মুনি আসাম থেকে প্রথম এসেছিলেন বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার পোড়াবাড়িতে। তিনিই প্রথম পোড়াবাড়ির গরুর খাঁটি দুধ, চিনি আর ধলেশ্বরী নদীর জল দিয়ে বিশেষ উপায়ে এই চমচম প্রস্তুত করেন। এই চমচমের মধ্যে লুকিয়ে ছিল পোড়াবাড়ি চমচমের স্বাদ। আর এ কারণেই শত চেষ্টা করেও অন্যান্য এলাকার মিষ্টির কারিগররা পোড়াবাড়ির চমচমের ধারে কাছেও আসতে পারেনি।
পোড়াবাড়ি বাজার থেকে একটু পশ্চিমেই ধলেশ্বরী নদী। এটি যমুনার একটি শাখা। টাঙ্গাইল পাঁচআনী বাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী স্বপন কুমার ঘোষ জানান, এক সময় এই নদীর ধারে পোড়াবাড়ির বাজারে স্টিমার ঘাট ছিল। যমুনা থেকে আসা বড় বড় স্টিমার, লঞ্চ, কার্গো সেখানে নোঙ্গর ফেলত। সমাজের নানা ধরনের লোকজনের আনাগোনার ছিল এই ঘাটে। বড় বড় রাজা-বাদশা, জমিদার, পাইক-পেয়াদা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবার একমাত্র লক্ষ্য ছিল পোড়াবাড়ির চমচমের আকর্ষণ। এমনকি কলকাতা থেকে মানুষজন জাহাজে চড়ে মিষ্টি খেতে আসত পোড়াবাড়ি বাজারে। মিষ্টির রাজা বলে খ্যাত পোড়াবাড়ির চমচমের স্বাদ আর স্বাতন্ত্রেরও জুড়ি মেলা ভার। এই সুস্বাদু ও লোভনীয় চমচম মিষ্টি টাঙ্গাইলের অন্যতম একটি ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য প্রায় দু’শো বছরের প্রাচীন। ব্রিটিশ আমল থেকে অবিভক্ত ভারতসহ বিশ্বের নানা দেশে পোড়াবাড়ির চমচম টাঙ্গাইলকে ব্যাপক পরিচিতি করেছে।
সম্পাদনা – অনন্যা করণ
Discussion about this post