দৈনিক জীবনে হঠাৎ চাপ পড়ে গেলে বা বিরক্তি ধরে গেলে সেই পরিস্থিতিকে প্যারায় আছি বলে সম্বোধন করেন বাংলাদেশীরা। তবে এই প্যাঁড়া যদি হয় সুস্বাদু মিষ্টি তখন তা সকলেরই পছন্দ। বাংলাদেশের জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলার প্যাঁড়া সন্দেশ একটু বেশিই মন কেড়েছে বাংলাদেশীদের।
প্যাঁড়া সন্দেশ বাংলাদেশে প্রবেশ করে বিহার থেকে। নওগাঁ জেলা থেকে আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। সরিষাবাড়ির প্যারার সেরকম কোন ইতিহাস জানা যায়নি। তবে প্রসিদ্ধ দোকান বর্দ্ধন মিষ্টান্ন ভান্ডার এবং কালাচাঁদ মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিকেরা জানায় তারা বেশ কয়েক পুরুষ ধরে এই ব্যবসা সামলাচ্ছেন। মিষ্টি তৈরির পদ্ধতি শুনতে সহজ লাগলেও পরিমাপ ঠিক রাখার বিষয়টা বেশ ঝক্কির। তবে পাকা হাতের কারিগরদের কাছে এসব খুবই তুচ্ছ বিষয়। সরিষাবাড়ির প্যাঁড়া সন্দেশের স্বাদ বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের প্যাঁড়া সন্দেশের তুলনায় আলাদা। এর আদিম প্রস্তুতকারক কে ঠিক জানা যায় নি।
সরিষাবাড়ির প্যাঁড়া নজরকাড়া হওয়ার আরেক কারণ হলো এর আকৃতি। বাংলাদেশে প্যাঁড়া বেশ বড় আর চ্যাপ্টা হয়। তবে এখানে ছোটো কয়েনের মতো দেখতে প্যাঁড়াই তৈরি হয়। সেই পুরনো দিনে ঠাকুরের ভোগের প্যাঁড়া যেমন হতো তেমনটাই। এতে পরিমাণে অনেকগুলো কিনতে পারা যায়। ছোট্ট এই উপজেলার মিষ্টি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পাড়ি দিয়েছে। সরিষাবাড়ির সমস্ত মিষ্টির দোকানেই এই সন্দেশ পাওয়া যায়। মধু মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে প্রতিদিন ১০০ কেজি প্যাঁড়া দেওয়া হয় ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। এটি বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির। দোকানের মালিক বলেন, “এই সন্দেশের প্রচলন শুরুই হয় দেবদেবীর ভোগ দিতে, তাই মায়ের উদ্দেশ্যে আগে মিষ্টি পাঠানো হয়।” এই দোকান গত ১২০ বছর ধরে রমরমিয়ে চলছে। খাঁটি দুধের তৈরি প্যাঁড়া সন্দেশ সরিষাবাড়ির গর্ব। জামালপুর গেছেন অথচ এই অমৃতের স্বাদ নেয় নি এমন মানুষ নেই। দোকানিরা তাদের এলাকার বহু বছরের এই ঐতিহ্য রক্ষায় ব্রতী রয়েছেন।
আরও পড়ুন চণ্ডীদাসের কবিতার পাশাপাশি বাঙালি আজও মশগুল ছাতনার প্যাঁড়ায়
Discussion about this post