বেশ ভোর বেলা থেকেই লাইন দিয়ে বসতো সারি সারি দইয়ের ভারের ঝুড়ি। নদীপথে এসে তিস্তার পাড়ে বসা দইয়ের স্বাদ নিতো দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানুষ। বাড়িঘর আপনজনদের জন্যও নিয়ে যেতো অনেকে। একসময়ের খুব সাধারণ দৃশ্য হলেও, এখন আর সেই দইয়ের হাট বিলুপ্ত। গল্প হচ্ছে পূর্ব বাংলার নওগাঁ জেলার মিষ্টি দইয়ের। একসময় পুরো বাংলাতে দইয়ের জন্য এই জায়গাকে সকলে চিনতো। কালক্রমে আস্তে আস্তে সবাই সে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে বলাই ভালো হবে। হতে পারে কারিগরের অভাব। এখন শহরের রাস্তায় রাস্তায় কাঁধে ঝুড়ি ঝুলিয়ে দই বিক্রি করতে দেখা যায় দুই একজন পুরোনো দই কারিগরকে। দইয়ের ভারের শিল্পও নওগাঁর মৃৎশিল্পীদের জীবিকা নির্বাহের সঙ্গী ছিল। সে শিল্পও এখন প্রায় অর্ধমৃত।
তবে দইয়ের জায়গায় নিজের দাপট প্রতিস্থাপন করে নিয়েছে নওগাঁর বর্তমান ঐতিহ্য ‘পাতলা দই’। ফুটপাত থেকে শহরের ছোট বড় সমস্ত মিষ্টির দোকানের অন্যতম সেরা আকর্ষণ এই পাতলা দই। দেশের অন্য জায়গায় এই পানীয় মাঠা বা ঘোল নামে পরিচিত। টক দইয়ের সাথে চিনি মিশিয়ে তৈরি এই পানীয় এখন দেশ খ্যাত। প্রতিদিন প্রায় দুপুর বিকেল সময় করে শহরের বাজার এলাকার ফুটপাত জুড়ে দেখা যায় এই পাতলা দই বিক্রেতাদের। ৩০-৩৫ টাকা থেকে শুরু করে দাম ও পরিমাণ অনুযায়ী বিভিন্ন সাইজের মাটির ভারে বা বড় সাইজের গ্লাসে বিক্রি হয় এই পানীয়। গরমকালের সাথে রমজান মাস হওয়ায় এর চাহিদা এখন তুঙ্গে।
তবে স্থানীয় মানুষজনের থেকে জানা যায় আগে এই পানীয়টি সাধারণ মানুষের জন্য খুব সহজলভ্য হলেও এখন ধীরে ধীরে সেটা বেড়ে যাচ্ছে। শুধু রমজান উপলক্ষেই জায়গা ভেদে দাম বেড়েছে ভারপ্রতি ১৫-২০ টাকা। যা দৈনিক খেটে খাওয়া মানুষদের পুরো নাগালের বাইরে। দোকানদার এবং বিক্রেতারা যদিও বলেছেন দুধ চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের কিছু করার নেই। এভাবে চললে মিষ্টি দইয়ের মতো এই পাতলা দইও বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্য হয়ে যায় কিনা সেটা ভাববার বিষয়।
Discussion about this post