‘ব্যোমকেশ বক্সী’র লীলাকে মনে পড়ে? হ্যাঁ, ব্যোমকেশের সেই প্রাক্তনী লীলা। সুশান্ত সিং রাজপুত অভিনীত ব্যোমকেশ বক্সীর সেই লীলা হলেন পর্দার এপারের মৌমিতা চক্রবর্তী। নতুন প্রজন্মের যে কজন বাঙালি বলিউডে জায়গা করেছেন, তাদের মধ্যে মৌমিতা চক্রবর্তী বেশ নজরকাড়া। রূপোলি পর্দার পরিচিত ভিলেন মুখটি বাস্তবের বেড়াজালে ঠিক কেমন! চলুন তাঁর সাথেই কথোপকথনটা তবে সেরে ফেলা যাক।
অভিনয়ের সঙ্গে রিলেশনশিপ কীভাবে শুরু?
পরিবারের কথা রাখতেই গ্র্যাজুয়েশনের পর মাস্টার্সটা করেছি। দিল্লীর ইন্টারন্যশনাল বিজনেস ম্যানেজমেন্ট থেকে পাশ করে চাকরিও পাই। চাকরি করছি তখন হঠাৎই এবিপির সানন্দা তিলোত্তমার বিজ্ঞাপনটি চোখে পড়ল। চাকরি ছেড়ে অংশ নিলাম ২০০৯ সালের সানন্দা তিলোত্তমায়। টপ ফাইভে নামও এল। আর সাথে সাথেই বিনা অডিশনে অভিনয়ের হাতছানি। স্নেহাশিস চক্রবর্তীর ব্লুজ প্রোডাকশন হাউজেও সুযোগ পেয়ে যাই। তবে শুরুতেই নেগেটিভ ক্যারেক্টর পেয়ে একটু অখুশিই ছিলাম। কিন্তু পরে বুঝলাম ভিলেন চরিত্র করাটাও বেশ অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
এই সময়ে দাঁড়িয়ে একজন সফল অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে গেলে প্রতিভাই কি যথেষ্ট?
না। শুধুই প্রতিভার খাতিরে আজকাল সুযোগ পাচ্ছে না কেউই। এখন অভিনয়ে আসতে গেলে ব্যক্তিগত বিশেষ পরিচিতি ছাড়া চলছে না। আমার অনেক পরিচিত, ভালো অভিনয় দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও বড় বড় প্রোজেক্ট পাচ্ছেন না। সোর্স, কনট্যাক্ট বা নেটওয়ার্ক এসব খুব প্রয়োজন আজকের দিনে দাঁড়িয়ে। অন্ততঃ পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে র্যাপো যার সঙ্গে যার বেশি তাঁর কাজের অগ্রাধিকার আসে।
দেড় দশকের অভিনয় জগতে থেকে কখনও চরম ডিপ্রেশনের মুখোমুখি হয়েছেন কি?
খুবই সেল্ফ মোটিভেটেড আমি। এমন কোনও বিশাল ডিপ্রেশন হয়নি কখনোই। ওসব থেকে নিজেই নিজেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করি বরাবর।
করোনা পরবর্তীতে পৃথিবীতে বাংলা সিনেমার ভবিষ্যৎ কী? অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম বা ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মই কি শেষ ভরসা?
২০২০ এর মার্চে লকডাউনের আগে আমরা কি জানতাম এই পরিস্থিতি তৈরি হবে? তাই ভবিষ্যৎ এভাবে বলা যায় না। তবে এটুকু বলতে পারি, মানুষের জন্য সিনেমা আবার সিনেমার জন্য মানুষ। সিনেমা যেমন তৈরী হয় মানুষকে আনন্দ দিতে। আবার মানুষের আবেগগুলোকে নেড়েচেড়েই সিনেমা তৈরী হয়। তাই সিনেমা আর মানুষের সম্পর্ক চিরন্তন।
অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম বা ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মই কি শেষ ভরসা কিনা এটিও আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। তবে স্ট্রিমিং প্লাটফর্মগুলো কিংবা ইউটিউব লকডাউনের জেরেই ভীষণরকম প্রভাব ফেলেছে। হলের জায়গা নিয়েছে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। মাল্টিপ্লেক্স কিংবা ওয়ান মুভি থিয়েটার স্বমহিমায় কবে ফিরে আসবে তা বলা মুশকিল।
টেকনিক্যালি অভিনয় করে বেরিয়ে যাওয়া? নাকি চরিত্রের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে চরিত্র হয়ে ওঠা! কোনটি একজন অভিনেতা/ অভিনেত্রীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিৎ?
যে কোনও অভিনেতাই একজন সাধারণ মানুষ। আমরা কখনোই একটি অন্য মানুষ হয়ে উঠতে পারি না। কাজেই এই কথাটিতেই আমার আপত্তি রয়েছে। আমরা একটা চরিত্র কল্পনা করতে পারি, সেই মতো অভিনয় করতে পারি। একবার চরিত্র হয়ে উঠতে পারলে টেকনিক্যাল ব্যাপার নিয়ে ভাবার কোনো দরকারই পড়ে না। বাকি দরকারটুকু ডিরেক্টর ওয়ার্কশপ করিয়ে শিখিয়েই থাকেন।
নাটক, মেগাসিরিয়াল, সিনেমা, শর্টফিল্ম এগুলোর মধ্যে কোনটিতে নিজেকে খুঁজে পেতে চান?
ক্রিয়েটিভিটি! যেখানে থাকবে সেখানেই আমি থাকতে চাই। তবে আমার ভালো লাগা বলতে ফিল্ম মেকিং। সাত আট বছর ধরে এতেই জড়িয়ে রয়েছি। ইমতিয়াজ আলির স্ত্রী প্রীতি আলির ‘হামারা মুভিজ’ এর হয়ে পাঁচটি শর্ট ফিল্ম নির্মাণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম। ২০১৭ সালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে একটি কাজে ডিরেক্ট করেছি, আগামী দিনে সেটি মুক্তি পাচ্ছে।
রূপোলি পর্দার কাদের থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন?
এই তালিকাটি একটু বড়ই হবে। সাবানা ইয়াসমি, সুপ্রিয়া পাঠকের মতো মানুষদের কাজ বেশি পছন্দ করি। পরিচালকের দিক দিয়ে সঞ্জয় লীলা বনশালী, দিবাকর ব্যানার্জীর কাজ বেশ লাগে। আর বাংলার অপর্ণা সেনের থেকে ভীষণ রকম অনুপ্রাণিত। স্টাইল স্টেটমেন্টের দিক থেকে দীপিকা পাডুকোনের অন্ধ ভক্ত বলতে পারেন। আর সুশান্ত সিং রাজপুতের অভিনয় দক্ষতা অনুপ্রেরণাযোগ্য।
ব্যক্তি মৌমিতা নাকি অভিনেত্রী মৌমিতা কে বেশি পারফেকশনিস্ট?
ব্যক্তিগত জীবনে উনিশ-বিশ ভুল তো করেই থাকি। সেদিক দিয়ে নিজেকে পারফেকশনিস্ট বলা যায়না। তবে কিছু এথিক্স মেনে চলি এটুকু বলতে পারি।
বলিউডের শক্ত মাটিতে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছেন মৌমিতা চক্রবর্তী। বর্তমানে পরিচালক ইমতিয়াজ আলির স্ত্রী প্রীতি আলির প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন। আগামীতেও আরও উন্নতির সিঁড়িতে হয়ত তাঁকে দেখা যাবে।
সম্পাদনা – অনন্যা করণ
Discussion about this post