রাজনীতির আঙিনায় ‘চপ শিল্প’ ঘিরে চাপান উতোর চলছে বহুদিনই। শাসক-বিরোধীর জনমানসে প্রভাব বিস্তারের জন্য দড়ি টানাটানিতে ‘চপ ও চায়ের’ চর্বিত চর্বণ প্রাইম টাইম হটসেলার। কেন্দ্রের নেকনজর কিংবা বঞ্চনার বিতর্কে মুখরিত আকাশ-বাতাস। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব বহুদিনই। বিরোধী মহলের বক্তব্য অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রের সুযোগের অভাবকে ঢাকতেই না কি কাশফুল দিয়ে বালিশ-তোষক, চপ-মুড়ি দিয়ে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন ভাসিয়ে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। চাকরি বা ব্যবসার অনুকূল পরিবেশের অভাবটাই কী উপহাসে পরিণত চপ শিল্প ফুটিয়ে তোলে? বীরভূমের কসবা গ্রাম পঞ্চায়েতের জীবন জীবিকার একটা ব্যতিক্রমী গল্প কিন্তু অন্য কথা বলে।
কবিগুরুর আপন দেশ বোলপুরে স্বনির্ভরতার ‘পোস্টার বয়’ হয়ে নজর কেড়েছেন এক টোটো চালক। শান্তিনিকেতনকে কেন্দ্র করে বাংলার পর্যটন গড়ে উঠেছে বহুদিন। ব্যাটারি পরিচালিত পরিবেশ বান্ধব টোটো যাত্রী পরিষেবার ক্ষেত্রে হয়ে উঠেছে বোলপুরের অন্যতম জীবিকার মাধ্যম। তবে আলোচনায় উঠে আসা টোটো চালকের বিশেষত্ব অন্য রকম। অর্ধদিবস টোটো চালিয়ে রোজগারের অর্ধেকটা উপার্জন কম বেশি করলেও বাড়তি রোজগারের জন্য টোটোকেই ভ্রাম্যমান চপের বিপণীতে পরিণত করেছেন তরুণটি। কাঠের পাটাতন সিটের ওপর রেখে চলছে গরম গরম চপ ভাজা। ক্রেতারাও এই অভিনব দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন ভালোই। চপের এমন ভ্রাম্যমান দোকান তাই নজর কেড়েছে সবার। তরুণ টোটোচালক ও চপ বিক্রেতার বক্তব্য অনুযায়ী সময়ের দাবি মেনে উপার্জন বাড়াতে প্রতিযোগিতার বাজারে, অভিনব পরিকল্পনা ছাড়া উপায় নেই। চপ বিক্রেতার বিকল্প বিজনেস মডেল সাড়া জাগিয়েছে সমাজ বিজ্ঞানীদের মধ্যেও।
বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী ও রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ডাক্তার তাপস পালের অভিমত এ প্রসঙ্গে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী উন্নয়নের মডেল বিবিধ হতে পারে। কোনো নির্দিষ্ট ফর্মুলা নেই এই ক্ষেত্রে। ভারতের মতো জনবহুল রাষ্ট্রে, কেন্দ্র বা রাজ্যের এই বিপুল মানুষের আর্থিক উন্নয়নের ভার সামলানো কার্যত অসম্ভব। বিশেষ করে অসংগঠিত ক্ষেত্রের জীবিকা সংগ্রামীদের রোজগারের বিকল্প সন্ধান করতেই হবে। অঞ্চল ভিত্তিক সম্পদের অসম বন্টন বিকাশের ধারাকেও প্রভাবিত করে। সরকারি সুযোগ সুবিধার অভাবকে কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে বরং আত্মনির্ভরতা ও উদ্ভাবনী ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। তাঁর মতে, দেশের সার্বিক উন্নতি তখনই সম্ভব যখন কর্মঠ তরুণ সম্প্রদায় উপলব্ধ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে বিকাশের রাস্তায় হাঁটবে। আর্থিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করাও বিশেষ জরুরি বলে প্রবীণ শিক্ষক মনে করেন।
Discussion about this post