মিষ্টির নাম শুনলে বাঙালি হোক বা অবাঙালি, মুখে জল আসে সকলেরই। আর তা যদি হয় গরম গরম, তাহলে তো আর কথাই নেই! তবে এই গরম মিষ্টির স্বাদে গন্ধে মাতোয়ারা করে দিতে পারে খন্ডলের মিষ্টি। ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের খন্ডলহাই বাজারে রয়েছে এই মিষ্টির দোকান। এই দোকানের বিশেষত্ব হল, একদম চুলা থেকে নামানো ধোঁয়া ওঠা গরম গরম মিষ্টি। এই স্বাদের জুড়ি মেলা বড়ই ভার।
এই মিষ্টির টানে দূরদূরান্ত থেকে খণ্ডলহাই বাজারে ছুটে আসেন বহু মানুষ। শুধু কি দেশে? দেশ পেরিয়ে আজ বিদেশেও পৌঁছে যাচ্ছে এই মিষ্টি। চাহিদা এতই বেশি যে একই নাম নিয়ে বহু দোকান বিক্রি করে চলেছে মিষ্টি। তাই ক্রেতাদের ঠকতে হয় অনেকাংশেই। তবে খাঁটি জিনিসের স্বাদের সাথে তফাৎ তো থাকবেই। পরশুরামের খন্ডলের মিষ্টি প্রায় ৫০ বছর ধরে নিজেদের মিষ্টির গুণাগুণকে ধরে রেখেছে যত্ন সহকারে। স্বাধীনতার কিছু সময় পরেই কবীর আহাম্মদ পাটোয়ারী বক্সমাহমুদ খন্ডল হাইস্কুলের পাশে খোলেন একটা ছোট্ট মিষ্টির দোকান। যেখানে ময়রার কাজে যোগ দেন কুমিল্লার যুগল চন্দ্ৰ দাস। তাঁর হতেই প্রথম তৈরি হয় এই মিষ্টি। যা আজ জগৎ বিখ্যাত। খণ্ডলের নাম অনুসারে এই মিষ্টির নামকরণ হলেও জেলায় এখন অনেক খন্ডলের মিষ্টির দোকান তৈরি হয়েছে। তবে কবির আহাম্মদ পাটোয়ারীর ও খন্ডলের মিষ্টি মেলা এই মিষ্টির স্বাদকে এখনও ধরে রেখেছে।
যুগল চন্দ্ৰ দাস এখন বয়স হওয়ায় আর তৈরি করেন না মিষ্টি। আবার কবীর আহাম্মদও ব্যবসার ভার দিয়ে দিয়েছেন তাঁর দুই ছেলে বেলাল হোসেন ও আমির হোসেনকে। একসময় নাকি ৬২ রকমের মিষ্টি তৈরি করতে পারতেন কারিগরেরা। পুজো-পার্বণ থেকে শুরু করে সমস্ত অনুষ্ঠানে এই মিষ্টির দোকানে পড়ে লম্বা লাইন। এই সময় মোট ৯০-১০০ কেজি মিষ্টি তৈরি করা হয়। আর বাকি দিনে ৫০-৬০ কেজি। বহু সুপরিচিত মানুষজন আসতেন এই মিষ্টি খেতে।
এই মিষ্টি তৈরির প্রণালীতে একটু চোখ রাখা যাক। এটি তৈরি হয় খাঁটি গরুর দুধ, ময়দা আর চিনি দিয়ে। দুধে এই সামান্য ময়দার ব্যবহার করা হয় ছানাকে গাঢ় করার জন্য। তবে সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হল, ব্যবহার করা হয় না কোনও রাসায়নিক উপাদান। দুধ আর ময়দার মিশ্রণ দিয়ে তৈরি করা হয় ছানা। ছানা থেকে তৈরি হয় মরু। মরুকে গোলাকার করে মিষ্টি তেলে ভেজে ডুবিয়ে রাখা হয় চিনির শিরায়। ব্যস! তারপর গরম গরম ধোঁয়া ওঠা মিষ্টি চলে যায় ক্রেতাদের পাতে। ক্রেতাদের মতে, এই স্বাদের কাছে সব মিষ্টিই যেন ফিকে পড়ে যায়।
Discussion about this post