ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের রান্নায় বিভিন্ন রকম আছে এ কথা সত্য। ঠিক তেমনই স্বাদ, রঙ ও গন্ধের বিভিন্নতায় এদেশে রয়েছে রকমারি মশলার চল। বলা হয় দিল্লিতেই সব থেকে বেশি মশলা সহযোগে রান্না হয়ে থাকে। এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় যে মশলার বাজার, তা ভারতের দিল্লিতেই। মনে করুন দিল্লির খাড়ি বাওলি রোড দিয়ে যখন আপনি হেঁটে যাবেন, তখন আপনার নাকে হরেক রকমের মশলার সুবাস লাগবে। আপনি মশলার সুগন্ধে একটি বড় করে শ্বাস নেবেন। ব্যস্ততা না থাকলে হয়তো কোনো এক মশলার দোকানে গিয়ে দারুচিনির ভাঙা টুকরো মুখে নিয়ে চিবাতে চিবাতে মশলার দাম জিজ্ঞেস করবেন। হ্যাঁ এটিই এশিয়ার বৃহত্তম মশলা বাজার।
এই সংক্রান্ত ইতিহাস জানতে হলে সতেরো শতকের দিকে পিছিয়ে যেতে হবে। ভারতবর্ষ তখন শাসন করে মোঘল সুলতানেরা। ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো আস্তে আস্তে আসা শুরু করেছে। সম্রাট শাহজাহানের পাঁচ বিবির মধ্যে একজন ফতেহপুরি বেগম। তিনিই ফতেহপুর মসজিদ নির্মাণ করালেন। আর এই মসজিদের কাছেই গড়ে উঠলো এশিয়ার বৃহত্তম মশলার বাজার। খাড়ি বাওলি মসলা বাজারের শুরুর গল্পটা এরকমই। দিল্লির যে অংশে গড়ে উঠলো বিখ্যাত মশলার বাজার, সেই অংশে জলের প্রচন্ড অভাব ছিল। শের শাহর পুত্র ইসলাম শাহ্ ১৫৫১ সালে ওই এলাকার অধিবাসীদের সুবিধার্থে একটি কুয়ো বানিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই কুয়োর পানি ছিল লবণাক্ত। খাড়ি শব্দের অর্থ লবণাক্ত, আর বাওলি শব্দের অর্থ কুয়ো। সেই লবণাক্ত কুয়োর জন্য স্থানটির নাম হয়ে যায় ‘খাড়ি বাওলি’। সেই থেকে এখনও সেই নামই বহাল আছে জায়গাটির।
পুরো ভারতবর্ষে যত ধরনের মশলা পাওয়া যায় তার সবই পাবেন এ বাজারে। অনেক মশলা আছে যেগুলো ভারতে উৎপাদিত হয় না, সেগুলোও পাবেন। আফগানিস্তান, নেপাল থেকেও এখানে মশলার চালান আসে। কিছু দুর্লভ মশলা আছে, যেগুলো বহু খুঁজেও পাওয়া যায় না। খাড়ি বাওলিতে নিশ্চিতভাবেই আপনি সেগুলো পাবেন। অপরিশোধিত গোলাপি সৈন্ধব লবণ কিংবা আমচুর পাউডারের মতো জিনিসও এখানে অনায়াসে খুঁজে পাবেন।
খাড়ি বাওলির যে স্থায়ী দোকানগুলো দেখতে পাওয়া যায়, সেগুলো বংশ পরম্পরায় চলছে যুগের পর যুগ ধরে। অনেক দোকানে নবম কিংবা দশম প্রজন্ম ব্যবসা করছে। খাড়ি বাওলির ‘মেহের চাঁদ এন্ড সন্স’ এর দোকানেও ঘুরে আসা উচিত। একশো বছরেরও পুরোনো এই দোকান মশলার এক বিশাল আধার। সবচেয়ে ভালো মানের মশলা এখানে পাবেন আপনি। তবে মশলার সুখ্যাতি ছাপিয়ে যে জিনিসটির কারণে দোকানটি বিখ্যাত হয়ে উঠেছে, তা হলো এর নামকরা ‘মাসালা চা’। খাড়ি বাওলি নিছকই একটি ঐতিহাসিক বাজার– এমনটা ভেবে থাকলে ভুল করবেন। নানা রঙের, নানা গন্ধের মশলা পর্যটকদের আকর্ষণ করে নিমিষেই।
Discussion about this post