ভোজন রসিক বাঙালীর শীত মানেই পাতে থাকবে বিভিন্ন ধরণের পিঠে, সব্জি এবং নানা ধরণের গুড়ের মিষ্টি। আচ্ছা এর মধ্যে কিছু কি বাদ গেল? ঠিক ধরেছেন! বাদ পড়েছে কেক। যদিও কেক এখন শুধুই ক্রিসমাসে সীমাবদ্ধ নেই। সারা বছরের হৈ-হুল্লোড়ের একটি বড় সঙ্গী হয়ে উঠেছে। কিন্তু বড়দিন আর কেকের প্রতি ভালোবাসা যেন সমানুপাতিক। আর নতুন নতুন কেকের দোকানে সারা বছর ভিড় দেখা গেলেও বড়দিনে পুরনো বেকারীর প্রতি টান এখনও কমেনি বাঙালীর। বাঙালির বড়দিনে এমনই একটি দাপিয়ে বেড়ানো বেকারি হলো খড়গপুরের ‘লিটিল সিস্টার’ বেকারি।
১৯৯১ সালে দেবনন্দন মহাপাত্র খড়্গপুর আই আই টি সংলগ্ন এলাকায় প্রথম তৈরি করেন। তখন শুধু কেক নিয়েই ব্যবসা শুরু হয়৷ পরবর্তীকালে পেস্ট্রি, প্যাটিস ইত্যাদির সাথে নিজস্ব রেস্তোরাঁও খোলা হয়৷ কিন্তু ৩০ বছর বছর আগে পেস্ট্রি, পেটিস বা বড়দিনের কেক নিয়ে খুব একটা মাতামাতি ছিল না বললেই চলে। যদিও ধীরে ধীরে তা ক্রমশ বেড়েছে এবং খড়্গপুর অঞ্চলে দাপিয়ে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ‘লিটল সিস্টার’। ম্যানেজার প্রভিন কুমার বিগত ১০ বছর ধরে এই বেকারীর সাথে জড়িত। তাঁর থেকে জানা যায় যে আগে একেবারেই পুরনো পদ্ধতিতে কেক বেক করা হলেও এখন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সাহায্যে কেক তৈরি করা হয়৷ তিনি এও জানান যে এই কেক তৈরির পুরো পদ্ধতি প্রথম থেকে শেষে কেক ফ্রস্টিং অবধি মহিলা কর্মচারীরাই করে থাকেন।
তাঁদের সবথেকে জনপ্রিয় কেক হল, ক্রিসমাসের জন্য স্পেশ্যাল ড্রাই ফ্রুট কেক, পাম কেক। ড্রাই ফ্রুট কেক তার মধ্যে অত্যন্ত বেশি মানুষকে আকর্ষিত করে তুলেছে। চেরি থেকে শুরু করে কাজু কিসমিস আরও বিভিন্ন রকমের শুকনো ফল ব্যবহার করা হয়৷ তাছাড়াও সারা বছর জন্মদিন বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য কেকের অর্ডার নেওয়া হয় যা ক্রেতার নিজেস্ব পছন্দের মতো করে তৈরি করা হয়৷ এসবের পাশাপাশি ব্রাউনি ভীষণভাবে বিক্রি হয় যা সম্পূর্ণ ভাবে ডিম ছাড়া তৈরি।
সময়ের সাথে কেক তৈরির পদ্ধতি যেমন পাল্টেছে তেমনই বেড়ে উঠেছে কেকের প্রতি চাহিদা। শহরের অন্যান্য ব্র্যান্ডেড দোকানের সাথে পাল্লা দিতে তাই পুরনো বেকারিগুলোকেও তাদের মতো অনেক ধরণের বেকিং পদ্ধতি শিখতে হচ্ছে। কিন্তু এই পুরনো বেকারির পাশ দিয়ে গেলে যে মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যায় তা সেই ব্র্যান্ডেড দোকানের সামনে বলা বাহুল্য তা নেই। বড়দিনে সবার ভালোবাসা থাকুক মুখের মিষ্টতায়, আর সেই মুখে মিষ্টি নিয়ে আসুক বাঙালির প্রিয় ক্রিসমাস কেক। তাই “পুরাতন বৎসরের জীর্ণ ক্লান্ত রাত্রী”-কে এবং সারা বছরের যা কিছু অবসাদ, দুঃখ বা চিন্তা বছর শেষে তাকে মিষ্টি মুখে বিদায় দেওয়া যাক!
Discussion about this post