এপার কিংবা ওপার, বাংলা মানেই এশিয়ার ‘মিষ্টি ভান্ডার’। ভোজনবিলাসী বাঙালির শেষপাতে মিষ্টি যেন খাদ্যতালিকায় পূর্ণতা আনে। তবে বাঙালির জীবনে মিষ্টির উপস্থিতি বহুমুখী। কোন শুভ কাজের শুরুর আগে হোক কিংবা অতিথি আপ্যায়নে মিষ্টি বাঙালির জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। দুই বঙ্গের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে ভিন্ন গঠন ও স্বাদের বহু মিষ্টি। রসে ভেজানো মিষ্টির স্বাদ বা শুকনো মিষ্টির বৈচিত্র্যতা দুই-ই বাঙালির মন টানে। আর শুকনো মিষ্টির বৈচিত্র্যতার কথায় প্রথমেই মনে আসে কাটোয়ার বিখ্যাত মিষ্টির দোকান ‘মিঠাই’য়ের অপূর্ব স্বাদের কালাকাঁদের নাম।
দোকানটির আসল নাম ‘মিঠাই’ হলেও বর্তমানে এই দোকানের পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা ধ্রুবর কালাকাঁদ নামেই। পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার মাধবীতলা এলাকায় অবস্থিত এই মিঠাই ওরফে ধ্রুবর কালাকাঁদ নামক দোকানটি। প্রায় ৬৮ বছরের পুরোনো এই দোকানে অন্যান্য মিষ্টি বিক্রি হলেও, এখানকার কালাকাঁদের চাহিদা সর্বাধিক। কাটোয়া সহ আশেপাশের অঞ্চল থেকে অনেকেই এখানে ছুটে আসেন শুধুই কালাকাঁদের টানে। ক্রেতাদের কথায়, “এখানকার কালাকাঁদ বেশ সুস্বাদু ও দাম অনুযায়ী সাইজও ভালো। তাই পুজো পার্বণ কিংবা অতিথি আপ্যায়নের জন্য কালাকাঁদ নিতে হলে এখান থেকেই নিয়ে যাই।”
ছোট থেকে শুরু করে, নিজের মিষ্টির গুণমান ও স্বাদের ওপর ভর করে বর্তমানে নিয়মিত ৫-৬ জন কর্মচারী কাজ করেন এই দোকানে। সুস্বাদু এই মিষ্টি প্রস্তুতকারকদের মতে, কালাকাঁদ তৈরীর মূল উপকরণ হল- জল ঝরানো ছানা, গুঁড়ো দুধ, গুঁড় চিনি, দুধ, ঘি ও এলাচ গুঁড়ো। প্রথমে জল ঝরানো ছানাকে খুব ভালো করে চটকে মেখে নিতে হয়। এরপর এক কাপ দুধ সমান্য গরম করে তাতে গুঁড়ো দুধ ও ঘি ভাল করে মিশিয়ে নিতে হয়। এরপর সেই দুধে ছানা আর চিনি দিয়ে মিনিট পনেরো নাড়াতে হয়। সবশেষে মিশ্রণে এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিতে হয়। ঠাণ্ডা হওয়ার পর মিশ্রণটিকে একটি পাত্রে সমান করে ছড়িয়ে ফ্রিজে সেট হবার জন্য কিছু সময় রাখতে হয়। এরপর সেটিকে ইচ্ছেমত আকারে কেটে নিতেই তৈরী কালাকাদ মিষ্টি।
অনবদ্য স্বাদে ৮০ বছরের পুরনো শিমুরালির কালাকাঁদ জিন্দাবাদ!
কাটোয়ার এই দোকানে কালাকাঁদ বিক্রি হয় দুই নিয়মে। বাকি সব দোকানের মত কেবল পিস হিসেবে নয়, সুস্বাদু এই মিষ্টি এখানে বিক্রি হয় ওজন হিসেবেও। ওজন হিসেবে কেজি প্রতি ৪০০ টাকা এবং প্রতি পিস ১০ টাকা দরে বিক্রি হয় ধ্রুবর কালাকাঁদ। দোকানের কর্ণধার ধ্রুব ঘোষ জানান, “ আমার নামানুসারেই সবাই এই দোকানকে এক ডাকে ‘ধ্রুবর কালাকাঁদ’ নামেই চেনে। আমাকে যেমন সব সরঞ্জাম ওজন করেই কিনতে হয়, তাই আমিও কালাকাঁদ ওজন করেই বিক্রি করি। মিষ্টির কোয়ালিটি আমরা সবসময় ভাল রাখার চেষ্টা করি, তাই একবার কেউ এখানকার কালাকাঁদ খেলে তাকে আবার এর অপরূপ স্বাদের টানে এখানে আসতেই হবে।”
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – প্রিয়াঙ্কা
Discussion about this post