সত্যিই এক বিচিত্র দেশ ভারতবর্ষ। সারা বিশ্ব জুড়ে এখন যে রোগ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তার নামেই নাকি রয়েছে আস্ত একটা মন্দির! করনা বা করনি মাতার মন্দির। হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। রাজস্থানের বিকানির থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের দেশনোকেই রয়েছে করনি মাতার এই মন্দির। চতুর্দশ শতক থেকেই মা দুর্গার অবতার হিসেবে হিন্দু সন্ন্যাসিনী করোনি এখানে দেবী রূপে পূজিত হন। তবে শুধু দেবীই নন, সঙ্গে রয়েছে তাঁর সন্তানরাও। প্রায় ২৫-৩০ হাজার ইঁদুর। তারাই এই মন্দিরের প্রধান বিশেষত্ব। রাজস্থানের যোধপুর ও বিকানিরের রাজপরিবারে করোনি দেবীর প্রভাব ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সন্ন্যাসিনী করনি নিজের জীবদ্দশাতেই এই দেবীত্ব অর্জন করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যান তিনি। কারও মতে তিনি হয়তো খুন হন। তবে এর সঠিক কারণ আজও জানা যায় না। তাঁর অন্তর্ধানের পরই বিকানিরের রাজপরিবার মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করে। তবে ধর্মীয় ব্যাপারগুলি বাদ দিলেও এই মন্দিরটির স্থাপত্য এবং ভাস্কর্য দর্শনার্থীদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়।
করনি মন্দিরের ভেতরে যত্র তত্র ঘুরে বেড়ায় কালো ইঁদুরের দল। এদের নাম কাব্বাস। তাদের এখানে পবিত্র বলেও গণ্য করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, এই ইঁদুরগুলি হল করনি মাতারই বংশধর। শুধুমাত্র এই ইঁদুরগুলিকে দর্শন করতেই বহু দূর থেকে ভক্তের দল হাজির হয় এই মন্দিরে। তবে কালো ইঁদুর ছাড়াও রয়েছে সাদা ইঁদুরের দল। স্থানীয়দের মতে, এরা হলেন স্বয়ং করনি মাতা এবং তার গর্ভজাত সন্তান। এই ইঁদুরগুলিকে নিয়ে দু’টি গল্পও বেশ প্রচলিত। বাসিন্দাদের কিছুজনের দাবী, করনি মাতার শত শত সন্তান এবং সৎ ছেলে লক্ষ্মণ কপিল সরোবরে জল খেতে গিয়ে হঠাৎ ডুবে যায়। তাদের বাঁচাতে যমরাজের শরণাপন্ন হন করনি মাতা। যমরাজ লক্ষ্মণ সহ তাঁর সমস্ত সন্তানদের ইঁদুর হিসেবে পুনর্জন্ম দেন। আরেকটি মতে, কোনও এক সময় বিকানিরের কাছাকাছি কোনও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রায় ২০ হাজার সৈনিক পালিয়ে এসে দেশনোকে আশ্রয় নেয়। সৈনিকদের ক্ষেত্রে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালানো অতি গুরুতর অপরাধ। করনি মাতা তাদের প্রতি দয়া দেখিয়ে প্রাণ নেননি বটে কিন্তু শাস্তি স্বরূপ তাদের ইঁদুরে রূপান্তরিত করে দিয়েছিলেন।
মন্দিরে ইঁদুরের সম্মান দেবীর চেয়েও বেশি। দেবীর মন্দিরের দরজা খোলা হয় প্রতিদিন ভোর চারটের সময়। তারপর থেকেই ইঁদুর দেখার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। আর যদি সাদা ইঁদুরের দেখা মেলে তবে তা সৌভাগ্যের প্রতীক বলেও মনে করা হয়। কোনো ইঁদুর মন্দিরে ভক্তদের দেওয়া প্রসাদ খায় তাহলে সেটি অত্যন্ত সম্মানের বলে ধরা হয়। মন্দিরে প্রবেশ করলেই ভক্তকুলের পায়ের উপর হাজার হাজার ইঁদুর ঘুরে বেড়ায়। ভুলবশতঃ কোনো ইঁদুর যদি ভক্তদের পায়ের তলায় পিষে মারা যায়, তাহলে সেই ইঁদুরের সাইজের একটি সোনার ইঁদুর গড়ে দিতে হয়। এছাড়াও বছরে দুবার এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে দেশনোকে বসে করোনি মেলা। ভাবলে অবাকই লাগে! বিশ্বব্যাপী করোনার আতঙ্কের মাঝেই তার নামে আস্ত এক মন্দির দর্শনার্থীদের তাক লাগিয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। সত্যিই বিপুলা এই পৃথিবীর কতটুকুই বা আমরা আর জানি!
তথ্য ঋণ – শুভেন্দু দেবনাথ
Discussion about this post