শীত, আর গুড় এই দুই যেন এক অতুলনীয় যুগলবন্দী। কুয়াশা ঢাকা ঠান্ডা শীতের সকালে টাটকা খেজুরের রসের সত্যিই হয়না কোনো তুলনা। আর এই রস দিয়ে তৈরি ঝোলা গুড়, দানা গুড়, নলেন গুড়, পাটালি গুড়েরও তুলনা নেই। এই সব গুড়ই হল শীতের পার্বণে খুশির প্রধান উপকরণ। পিঠে, পুলির প্রধান উপাদান গুড়। গুড় ছাড়া স্বাদ যেন খোলে না! শীত যত ঘন হয়, খেজুরের রসও ততই মিঠে হয়। আর রসের স্বাদও যায় বেড়ে। কিন্তু, শীত ঠিকঠাক না এলে খেজুর রসেরও আকাল পড়ে।
সাধারণত বছরে ৪ মাস খেজুরগাছ থেকে মিষ্টি রস সংগ্রহ করা হয় এবং তা দিয়ে তৈরি করা হয় গুড়। এই রস পাড়া এবং জ্বাল দেওয়ার কাজের জন্য থাকেন গাছি। শহরের তুলনায় গ্রামে খেজুর গাছের সংখ্যা বেশি, ফলে শহরের থেকে গ্রামেই গাছিদের দেখা পাওয়া যায় বেশি। একটি খেজুর গাছ থেকে দিনে দুইবার রস পাওয়া যায়। ভোরের রসকে বলে জিরেন এবং বিকেলে পাওয়া রসকে বলা হয় ওলা। প্রতিদিন সংগ্রহ করা রসকে পাঁচ ঘন্টা আগুনে ফোটাতে হয় গুড় তৈরির জন্য। পৌষ মাসে পুরোদমে রস মেলার পর মাঘ থেকে রস কমতে শুরু করে। কিন্তু, বাঁকুড়ার তালডাংরাতে বহু আগে থেকেই খেজুর রসের আকাল। ফলে আকাল গুড়ের বাজারেও।
বিশেষ স্বাদ ও গন্ধের কারণে বাঁকুড়ায় নলেন গুড়ের চাহিদা বেশ বেশি। শীতের মরশুমে অসংখ্য গাছি পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুরের গ্রামগুলিতে খেজুর রস থেকে উৎপন্ন নলেন গুড়ের পসরা নিয়ে দিন গুজরান করেন। বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের সিমলাপাল, খাতড়া, ইন্দপুর, তালডাংরা এলাকায় প্রচুর খেজুর গাছ আছে। এছাড়া, রানিবাঁধ, রাইপুর, সারেঙ্গা, বারিকুল ও হিড়বাঁধ এলাকাতেও কমবেশি খেজুর গাছ রয়েছে। আশ্বিন মাসের পর থেকেই দূরদূরান্তের বহু মহলদার এই এলাকায় আসেন। কিন্তু এইবছর জাঁকিয়ে শীত না পড়ার ফলে ভালো খেজুর রস পাওয়া যাচ্ছে না। তৈরি হচ্ছে না ভালো গুড়। এদিকে খরচ সামলাতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে গাছিদের বা গাছের লিজ নেওয়া মহলাদারদের।
পর্যাপ্ত শীত না পড়াকেই ভালো খেজুর রস না পাওয়ার কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। শীত যত বাড়ে রসের পরিমাণ ততই বাড়ে। কিন্তু নভেম্বর মাস পার হয়ে ডিসেম্বর শুরু হলেও খেজুর রসের উৎপাদন অনেকটাই কম বলে মহলদাররা জানিয়েছেন। চলতি জানুয়ারি মাসেও সেই উৎপাদন কতখানি বাড়বে, তা নিয়ে চিন্তিত গাছের লিজ নেওয়া মহলাদারেরা এবং খেজুর রস পেড়ে যাঁদের সংসার চলে, সেই গাছি বা শিউলিরা। ফলে, আবহাওয়ার দিকেই তাকিয়ে তাঁরা।
Discussion about this post