এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন, যার প্রিয় ঋতু শরৎ কাল নয়। শরৎ কাল মানেই উৎসবের মরসুম। এই সময়েই হয় মা দশভুজার আগমন। মায়ের আগমনী বার্তা বাঙালির মনে নতুন উদ্যমের সঞ্চার ঘটানোর পাশাপাশি, প্রকৃতিকেও সাজিয়ে তোলে অপরূপ সাজে। সারা বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের বহু শিল্পীদের জন্য এই সময় যেমন একটু ভালো থাকার আশা যোগায়। ব্যতিক্রম নয় পূর্ব বর্ধমানের বনকাপাসিও। এখানকার শিল্পীদের কাছেও এই সময় দেশের শিল্প মানচিত্রে নিজেদের দক্ষতা প্রকাশের অন্যতম সময়।
বর্ধমানের মঙ্গলকোটের নিকটবর্তী গ্রাম বনকাপাসি। বনকাপাসি বাইরে থেকে আর পাঁচটা গ্রামের মতো হলেও, এই গ্রামের শিল্পসত্তা অবাক করে তোলে সবাইকে। এখানকার তৈরী শোলার সাজেই সেজে ওঠেন মা দুর্গা। এখানকার শিল্পীদের হাতের অপরূপ শিল্পকলার জন্য সবাই ‘শোলা শিল্প গ্রাম’ নামে একডাকে চেনেন বনকাপাসিকে। একসময় এই গ্রাম ছিল মূলত: চাষাবাদের ওপর নির্ভরশীল। তবে চাষের ওপর এই নির্ভরশীলতা থেকে শিল্পীদের গ্রাম হয়ে ওঠার পেছনে যার অবদাল রয়েছে, তিনি শিল্পী হরগোপাল সাহা।
বাবা মোহন সাহার কাছেই শোলার কাজে হাতে খড়ি তার। হরগোপাল বাবুর হাত ধরেই এই শিল্পকলা আজ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের অন্ন সংস্থানের সুযোগ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বনকাপাসি গ্রামে প্রায় সব পরিবারই এই শিল্পের সাথে যুক্ত। তাদের পূর্বপুরুষ সূত্র থেকেই তারা এই একই কাজ করে চলেছে। প্রতি বছর পুজোয় আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মান থেকে শোলার দুর্গা প্রতিমার অর্ডার আসে এখানে। পঁচিশ হাজার টাকা থেকে এক লাখেও বিক্রি হয় এই দুর্গা মূর্তি। কলকাতা সহ বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের নামী ক্লাবগুলিতেও বনকাপাসির শোলা শিল্প জায়গা করে নিয়েছে।
এছাড়াও কুমোরটুলি সহ প্রায় সমস্ত পটুয়াপাড়াতেই বনকাপাসির তৈরী সাজ ও গয়নাতেই মা দুর্গা নতুন রূপে সেজে ওঠেন। হরগোপাল বাবুর পাশাপাশি এই গ্রামের অনেক শিল্পী তাদের অসামান্য কর্ম দক্ষতার জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছেন। সরকারি উদ্যোগে এখানে তৈরি হয়েছে ‘শোলা হাব’। এছাড়াও সরকারি মেলাতে ডাক পান তারা। ফলে চাহিদাও বেড়েছে বনকাপাসির শোলা শিল্পের। সময়ের সাথে সাথে আয়ের পাশাপাশি শোলা শিল্প আজ বনকাপাসির ভালবাসায় পরিণত হয়েছে।
Discussion about this post