শীতের মেজাজ জমে উঠছে ধীরে ধীরে। বড়দিন আসন্ন। বড়দিন আর কেক দুটো কথা একেবারে সমানুপাতিক। যদিও পণ্ডিতরা মনে করেন যিশুর সাথে কেকের কোনো সম্পর্ক নেই। জানা গিয়েছে, প্রাচীন গ্রিসে প্রথম দুধ, মধু, ময়দা এবং শুকনো ফল দিয়ে তৈরি করা হয় প্লাকাউস নামের কেক। কিন্তু সে গেলো গ্রিসের কথা। তবে সেই কেক কৃষ্ণনগরের খ্রিস্টান মহল্লায় এলো কবে থেকে? এই খোঁজ করতে গেলে উঠে আসে দু’জনের নাম। জন রোজারিও আর ফিলিপ বৈদ্য। আগে কৃষ্ণনগর-সহ নদিয়ার বেশ কিছু জায়গায় পৌষমাখানো বড়দিনে খ্রিস্টানপল্লি নবান্নের গন্ধে ম-ম করত। শোনা যায়, কৃষ্ণনগরে বাড়ির তৈরি কেক এসেছে আটের দশকের পর। যদিও পাঁচের দশকেই নদিয়ার মানুষ কেকের স্বাদ পায়।
খ্রিস্টানপল্লির অনেক ছেলেই বিদেশে কর্মরত ছিলেন। তাঁরাই বড়দিনে বাড়ি ফিরে কেক তৈরির প্রথা চালু করেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন ফিলিপ বৈদ্য। বিদেশে গ্রামোফোন কোম্পানিতে কাজ করতেন তিনি। বড়দিনে বাড়ি ফিরতেন ফির্পো, ফ্লুরিজের সুস্বাদু কেক নিয়ে। সেই কেক তিনি তুলে দিতেন মঙ্গলাপুকুরের ছোট এবং বড়দের হাতে। প্রতিবেশীদের তিনিই চিনিয়েছিলেন কেকের স্বাদ।
মোটামুটি কেকের স্বাদের সাথে নদিয়ার মানুষের পরিচয় ঘটে পাঁচের দশকে। তবে আটের দশকে বাড়িতে কেক তৈরি শুরু হয় রোজারিওর হাত ধরে। শোনা যায়, হঠাৎ একদিন তিনি হরেক রকম নাম না জানা সরঞ্জাম কিনে আনেন বাজার থেকে। যার গোটাটাই কেক বানানোর উপকরণ। খুব যত্ন করে সেই উপকরণ দিয়ে রোজারিও তৈরি করেন কেকের মিশ্রণ। তারপর সেই মিশ্রণ নিয়ে গিয়ে বেক করা হয় পাড়ার বেকারিতে। সেই কেক নিয়ে প্রতিবেশীদের উত্তেজনা ছিল চরমে। এখন অবশ্য সে উন্মাদনা আর নেই। কোভিডের পর থেকে ভাটা পড়েছিল কেক তৈরির ক্ষেত্রে। জনসমাগম না হলে কেক বিক্রি হবে কী করে! তবে এ বছর আবার আশার আলো দেখা যাচ্ছে খ্রিস্টানপল্লির বেকারিগুলোতে।
Discussion about this post