কলকাতার পুরনো নিলামঘরগুলোতে উঁকি মারলে মাঝে মধ্যে কিছু খুব সুন্দর জিনিস দেখতে পাওয়া যায়। এরকমই কিছু টোবি মাগ আমি দেখেছিলাম পার্ক স্ট্রিটের মেহেরাদের নিলাম ঘরে। সেগুলি আমার এতটাই সুন্দর লেগেছিল, আমি এগুলো নিয়ে আমার কিছু সংগ্রাহক বন্ধুদের সাথে কথা বলি, এবং জানতে পারি এদের সম্পর্কে। এদের সাইজ ও গঠনরীতি অনুযায়ী টোবি জগ অথবা টোবি মাগ বলা হয়ে থাকে। জগ ঢালা জন্য ব্যবহার করা হয়; মগ পান করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এগুলো তৈরি হয় ফিগারাল সিরামিক পিচার দিয়ে, যা একটি জনপ্রিয় চরিত্র, ঐতিহাসিক, কাল্পনিক বা জেনেরিক আকারে তৈরি (ব্যক্তি বা প্রাণী)। মোটামুটি ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দের সময় থেকে ইংল্যান্ডে এগুলো বানানো শুরু হয়।
‘টোবি’ নামটা কীভাবে এলো, সেটা নিয়ে অবশ্য নানান অভিমত রয়েছে। এগুলির প্রথমটি হল শেক্সপিয়ারের নাটক, টুয়েলভথ নাইটের স্যার টবি বেলচের চরিত্রের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছিল। এটি ফরাসি শব্দ “টোপে” থেকে এসেছে। দ্বিতীয়ত, এটি অষ্টাদশ শতকের ইয়র্কশায়ারের কুখ্যাত মদ্যপানকারী হেনরি এলওয়েসের নামে নামকরণ করা হয়েছিল, যিনি ‘টবি ফিলপট’ (বা ফিলপট) নামে পরিচিত ছিলেন। একটি পুরনো ইংরেজি মদ্যপানের গান ‘দ্য ব্রাউন জুগ’ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল, যা টবিকে শ্রদ্ধা জানায়। তবে প্রথম কে এই মগ বা জগ তৈরি করেন, সেটা রয়ে গেছে ইতিহাসের গর্ভেই। তবে যেই তৈরি করুক, অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে এগুলো ইংল্যান্ডে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল স্থানীয় পাব এবং ট্যাভার্নগুলোতে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে বিভিন্ন উপন্যাসের ও কাল্পনিক চরিত্র নিয়েও বানানো শুরু হয় এই মগ। অনেক সময় এর নিচে একটি মিউজিক বক্সও লাগানো হতো, যা পরিবেশনের সময় বাজতো। টোবি জগের জনপ্রিয়তা এমনভাবে বেড়ে গিয়েছিল যে ফ্রান্স, জার্মানি, আমেরিকা এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশে টোবি তৈরি করা হচ্ছিল। যদিও অ-ইংরেজিভাষী দেশগুলিতে এই ফিগারাল জগগুলির বিভিন্ন নাম রয়েছে।
একবিংশ শতাব্দীতে এগুলোর জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ায় টোবি মাগের কপালে নেমে আসে বিপর্যয়। বেশিরভাগ নির্মাতারা এগুলো তৈরি করা বন্ধ করে দেয়। আজ শুধুমাত্র তিনটি কোম্পানি এখনও ক্যারেক্টার এবং টোবি জগ/মাগ তৈরি করছে। তাই বর্তমানে এগুলোর জায়গা হয়েছে নিলাম ঘরে।
Discussion about this post