বাঙালির চিরকালের পরিচয় ‘ভেতো বাঙালি’। কারণ তাদের প্রধান খাদ্যই ভাত। তবে তাই বলে ভাজাভুজির প্রতি টান থাকবে না তা কি করে হয়? অতিথি আপ্যায়নে হোক বা যে কোনো অনুষ্ঠান বাড়ি, ফ্রাই কিংবা কাটলেটের কদর করেন না এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর। তবে বেশ কয়েক বছর আগে এসব আইটেমের চল বাড়ি বাড়ি ছিল না। সে সময় এসব খাবারের একমাত্র ঠিকানা ছিল কলকাতার বহু বছর আগে প্রতিষ্ঠিত বেশ কিছু কেবিন-রেস্তোরাঁ। যেগুলো এখনও রমরমিয়ে চলছে তিলোত্তমার বুকে। তেমনই একটি কেবিন হল উত্তর কলকাতার শোভাবাজারের বিখ্যাত ধীরেন কেবিন। নয় নয় করে আজ ৮৫ বছর ধরে মানুষের রসনাতৃপ্তির দায়িত্ব সামলে চলেছে এই কেবিন।
পথ চলা শুরু ১৯৩৫ সালে। স্বর্গীয় ধীরেন্দ্রনাথ দে-র হাত ধরেই চালু হয়েছিল এই কেবিন। শুরুর দিকে মেনুতে ছিল মটন ব্রেস্ট কাটলেট, ফিশ ফ্রাই, ফিশ কবিরাজি, ভেজিটেবল চপ, মোগলাই পরোটা-সহ আরও অনেককিছু লোভনীয় সব খাবার। তবে যে জিনিসটার জন্য এই কেবিনের খ্যাতি ছড়িয়েছিল চারিদিকে সেটা হল ফিশ কবিরাজি। এখানকার ফিশ কবিরাজি যে একবার খেয়েছে তার কাছে আচ্ছা আচ্ছা রেস্টুরেন্টের কবিরাজি মুখে রুচবে না। বর্তমানে অবশ্য মেনুতে যোগ হয়েছে আরও অনেক সুস্বাদু খাবার।
বহু তাবড় তাবড় গুণীজন এখানকার খাবারের ভক্ত ছিলেন ও আছেন। মহানায়ক উত্তম কুমারের মামাবাড়ি ছিল ওই পাড়াতেই। তাই মহানায়ক থেকে শুরু করে বিখ্যাত অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় সকলেরই পছন্দ ছিল এই ধীরেন কেবিন। এছাড়াও মান্না দে, রামকুমার চট্টোপাধ্যায়, শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়, পঙ্কজ রায় এমন বহু বিশ্ববিখ্যাত মানুষের পা পড়েছে এখানে। কখনও আবার তাঁরা বন্ধুদের সঙ্গে এসে জমিয়ে আড্ডা দিতে দিতে খাওয়া-দাওয়া করতেন। কখনই সেই অর্থে বিজ্ঞাপন নেই ধীরেন কেবিনের, কিন্তু মেজাজ আছে ষোলো আনা!
ধীরেনবাবু মারা যাওয়ার পরে তাঁর ছেলে প্রবীরকুমার দে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন ধীরেন কেবিনকে। এখনও রয়েছে সেই পুরনো শ্বেত পাথরের টেবিল ও সাবেকি ছোট ছোট কাঠের চেয়ার। মনে হবে যেন পুরনো কলকাতায় বসে স্বাদ নিচ্ছেন সুস্বাদু সব খাবারের। দোকানেও তাই ভিড় উপচে পড়ে বিকেল থেকে সন্ধে। এখানকার বিশেষত্ব হল দে পরিবারের সদস্যরা নিজে হাতে শুধু রান্না করাই নয়, খাবারও পরিবেশন করেন নিজেরা। এটা তাদের কাছে একপ্রকার ভালোবাসার মত। এভাবেই নিজেদের হাতের জাদুতে কেবিনের ঐতিহ্যকে বয়ে নিয়ে চলেছে দে পরিবার।
Discussion about this post