সংবিধান অনুযায়ী আমাদের দেশে রাষ্ট্রপতির পরে প্রধানমন্ত্রীই সর্বেসর্বা। মন্ত্রীসভার প্রধান তিনি, আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজের গুরুদায়িত্ব তাঁর উপরেই। জনগন তাঁকে ভোট দিয়ে এই পদের অধিকারী করে, কিন্তু তিনি যখন ভগবানের অবতার, বা খোদ ভগবান হয়ে মানুষের সামনে আসতে থাকেন? এমনটাই হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। হিটলারকে বলা হয়েছিল যীশু খ্রিষ্টের অবতার। কথায় বলে ‘হিস্ট্রি রিপিটস ইটসেলফ’। এই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তিও হয়ে গেছে। যা দেখলে অবাক হতে বাধ্য আমি, আপনি।
বেশ কয়েক বছর আগে বিখ্যাত জার্মান গাড়ির কোম্পানি বিএমডব্লিউ দুঃখ প্রকাশ করেছিল এক অদ্ভুত বিষয়ে। বিষয়টি ছিল মূলত দুঃখ প্রকাশ এবং গভীর অনুশোচনা প্রকাশের। ব্যাপারটা হল এমন, যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিএমডব্লিউ যুদ্ধের যন্ত্রপাতিসহ বেশ মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছিল হিটলারকে, ফলে হিটলারের বদান্যতায় তাদের ব্যবসাও উঠেছিল ফুলে ফেঁপে। এককথায় যাকে বলে ‘ইলেক্টোরাল বন্ড’, যা নিয়ে এই মুহূর্তে তোলপাড় সারা দেশ। সেই সময়ের বিএমডব্লিউর মালিক ছিলেন হিটলারের বেশ কাছের বন্ধু। এই গোটা বিষয় নিয়েই ২০১৬ সালে অনুশোচনা প্রকাশ করেছিল বিএমডব্লিউ।
কিন্তু, শুধু বিএমডব্লিউ নয়, এমন নামজাদা কোম্পানি সেই সময় হিটলারের মত স্বৈরাচারী শাসককে সমর্থন করে চাঁদা দিয়েছিল, যে তাদের নাম শুনলে আজ আপনার চোখ কপালে উঠবে। ভোক্সওয়াগেন, পর্শে, মার্সিডিজ বেঞ্জ, ডয়েশ ব্যাঙ্ক, যেএবি সহ আরও অসংখ্য কোম্পানি, যাদের সারা পৃথিবী আজ এককথায় চেনে। এই কোম্পানির তৈরি সামগ্রীর মালিক মানেই আপনি প্রভূত দৌলতের অধিকারী। এরাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারকে সমর্থন করে চাঁদা দান করেছিল হিটলারের ডোনেশন বাক্সে।
হিটলারের উত্থান, আর তার পরের ঘটনা তো সকলের জানা। আজ এত বছর পরে বিএমডব্লিউয়ের মত গাড়ি কোম্পানির মধ্যে অনুশোচনার সুর শোনা যাচ্ছে বটে, কিন্তু হলোকাস্টের স্মৃতি কি মুছে ফেলতে পারবে তাদের এই ‘অনুশোচনা’? উলটে প্রশ্ন আসে আজ থেকে বহুযুগ বাদে আমাদের দেশের ধনকুবেরদের এই একইভাবে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে না তো? কাঁড়ি কাঁড়ি ‘দানে’র টাকার হিসেব আজ মানুষের সামনে আসছে, সেইসব মানুষ, বিদেশি রাষ্ট্র প্রধান এলে যাঁদের দেওয়াল তুলে ঢেকে রাখা হয়। আজ থেকে বহু বছর পরে দেশের ‘শেঠ’দের খবরের কাগজে এই লিখে প্রতিবেদন ছাপাতে হবে না তো? যে “বড় ভুল হয়ে গিয়েছিল”
Discussion about this post