প্রতিবেদক বাংলাদেশ থেকে মীর মোনাম – বাকরখানির ইতিহাস মূলত মোগল আমল থেকেই, যা একসময় অভিজাতদের খাদ্য তালিকায় বেশ খ্যাতিমান ছিল। নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ’র আমলে এটি জনপ্রিয়তা পায় এবং ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ঐতিহ্যবাহী কিছু উপকরণ ও বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি এই মুচমুচে রুটি একসময় শুধুমাত্র রাজপ্রাসাদে পরিবেশন করা হতো। এটি রাজকীয় খাবার হিসেবে ধরা হতো এবং বিশেষ কারিগরদের দিয়ে তৈরি করানো হতো। দাম ছিল খুবই কম, প্রতিটি মাত্র কয়েক পয়সা বা আনা দামে বিক্রি হতো। পরবর্তীতে পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার, তাঁতীবাজার এবং চকবাজার এলাকায় ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়। কালের পরিক্রমায় এটি পুরান ঢাকার অলিগলিতে পাওয়া গেলেও, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে পুরোনো স্বাদ ও ঐতিহ্য রক্ষা করা এখন বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে স্বল্প আয়ের এসব কারিগরদের।

ঢাকার চকবাজার, লালবাগ, ইসলামপুরসহ বিভিন্ন স্থানে আজও বাকরখানি তৈরি হয়। সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন এসেছে স্বাদ ও উপকরণে। ময়দা, ঘি, চিনি, লবণ ও বিশেষ ক্ষেত্রে পনীর ব্যবহার করে এটি বানানো হয়। ঘি দিয়ে তৈরী বাকরখানি, মিষ্টি বাকরখানি, নোনতা-বাকরখানি, তিলের বাকরখানি ইত্যাদি বর্তমান বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এর দাম সাধারণত ২৫-৩০ টাকা প্রতি পিস, তবে বিশেষ ধরনের বাকরখানির ক্ষেত্রে এই মূল্য ৫০-১০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। মোগল আমলে এটি ঐতিহ্যবাহী মাটির চুলায় তৈরি করা হতো, যা এখনও কিছু কারিগর ব্যবহার করে থাকেন, তবে অধিকাংশ দোকানে এখন আধুনিক ওভেন ব্যবহৃত হয়। ঈদ ও রমজানের সময় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বাড়ে এবং উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়।

পুরান ঢাকার কিছু দোকান এখনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে, তার মধ্যে নাসু ফারুকের বাকরখানি অন্যতম। বহু বছর ধরে তারা খাবারের স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখেছে, যা তাদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সাহায্য করছে। একটা সময় ছিল যখন এই দোকানগুলোর সামনে দীর্ঘ লাইন পরতো, এখন সেগুলোকে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে আধুনিক বেকারি ও নানান রেস্তোরাঁর বাকরখানির সাথে।

ঈদ ও রমজানে বাকরখানির চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। স্বাভাবিক দিনের তুলনায় এই সময় এর বিক্রি ও দাম দুটোই বেশি থাকে। ইফতার ও সেহরিতে এটি বিশেষভাবে পছন্দের খাবার হয়ে ওঠে। এছাড়া দৈনন্দিন সময়ে সকাল ও সন্ধ্যার চায়ের সাথে এটির জনপ্রিয়তা বেশ ভালোই। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এটির প্রচলন কমে গেলেও, এখনও অনেকেই ঐতিহ্যের টানে বাকরখানি কিনে থাকেন।
আজ বাকরখানি শুধু খাবার নয়, এটি পুরান ঢাকার এবং বাংলার ঐতিহ্য। তবে কারিগরেরা যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় এটি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। চাহিদা ও উৎপাদন কমে যাওয়ায় একসময়ের জনপ্রিয় এই খাবার এখন অতীতের স্মৃতি হয়ে যাওয়ার পথে।
Discussion about this post