কথায় আছে “অল্পেতে স্বাদ মেটে না, এ স্বাদের ভাগ হবে না!” বিরিয়ানি শব্দটাও যেন ঠিক তাই। ইতিহাস সাক্ষী এই বিরিয়ানি শব্দের উৎপত্তি সুদূর পারস্যে! মূলত ফার্সী শব্দ ‘বিরিয়ান’ যার অর্থ ‘রান্নার আগে ভেজে নেওয়া’ ও ‘বিরিঞ্জ’ যায় অর্থ ‘চাল’। এই দুই শব্দের মেলবন্ধনেই উৎপত্তি হয়েছে বিরিয়ানির। তবু স্বাদ সাগরের মহারাজা ‘বিরিয়ানি’কে সেলাম জানিয়ে বাংলার হেঁশেলে তুলেছে বাঙালি। বর্তমানে বাঙালির স্বাদকোরকে পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নিয়েছে বিরিয়ানি! সেকাল থেকে একাল, বিরিয়ানির চাহিদা অনুযায়ী, বিরিয়ানির স্বাদেও জুড়েছে নতুন নতুন সংযোজন।
কলকাতা থেকে শুরু করে, হায়দ্রাবাদি, আম্বুর, লখনৌই, মালাবার, ভাটকলি, সিন্ধ্রি, বোম্বে, ডিন্ডিগুল, আজ্ঞে হ্যাঁ এই সবই হলো বিরিয়ানির নাম। এছাড়াও রয়েছে মোঘলাই বিরিয়ানি, সিমলা বিরিয়ানি, ঢাকার কাচ্চি বিরিয়ানি, তেহারি বিরিয়ানি, কামপুরি বিরিয়ানি, কী তাজ্জব ব্যাপার তাই না! তবে ভোজন রসিক বাঙালি কিন্তু বরাবরই এক্সপেরিমেন্টাল খাবার তৈরিতে সিদ্ধহস্ত। তাই নতুন প্রজন্মের হাত ধরে ডাব বিরিয়ানি থেকে শুরু করে রসগোল্লার বিরিয়ানিও হেঁটেছে রাজপথ। তবে এই তালিকায় পিছিয়ে নেই মা, ঠাকুমার হেঁশেলও। বাড়িতে তৈরি চট জলদি বিরিয়ানিতে মাংস ছাড়াই মাংসের স্বাদ আনতে মা, ঠাকুমারা বেছে নিয়েছিলেন গাছ পাঁঠা ওরফে এচোঁড়কে। যা স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। তাহলে আর দেরি কেন; বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন চটজলদি এঁচোড়ের বিরিয়ানি।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক উপকরণ। এঁচোড় ৫০০ গ্রাম, বাসমতি চাল ৫০০ গ্রাম, বড়ো আকারের ৪ টে আলু, ৪ টে মাঝারি সাইজের পেয়াঁজ, ভাজার জন্য ১টা আলাদা পেঁয়াজ, ২ কোয়া রসুন, ১ ইঞ্চি আদা, গোটা গরম মশলা পরিমাণ মতো, গোটা গোল মরিচ পরিমাণ মত, তেজ পাতা ২টো, শুকনো লঙ্কা ২টো, গোলাপ জল ২ টেবিল চামচ, মিঠা আতর ১ চা চামচ, টক দই ১০০ গ্রাম, ঘি ২ টেবিল চামচ, নুন স্বাদ অনুযায়ী, সাদা তেল ৪ টেবিল চামচ, ১টা জায় ফল ও ১টা জয়িত্রী।
প্রথমে, একটি পাত্রে জল বসিয়ে ফুটতে দিন। জল ফুটলে তাতে একটা বড় এলাচ ও তেজপাতা দিয়ে বাসমতি চাল ছাড়ুন। চাল সিদ্ধ হয়ে গেলে জল ঝরিয়ে রাখুন। তারপর এঁচোড়টিকে খোসা ছাড়িয়ে বড় ডুমো ডুমো করে কেটে নুন হলুদ দিয়ে ভাপিয়ে নিন। একইভাবে খোসা ছাড়িয়ে আলুও হাফ করে কেটে নুন হলুদ দিয়ে সুসিদ্ধ করে নিন। তারপর কড়াইতে তেল দিন, তেল গরম হলে, আলু ভেজে তুলে রাখুন। সেই তেলেই একটা পেঁয়াজ কুচিয়ে ভেজে তুলে রাখুন। আগে থেকে ভিজিয়ে রাখা জায়ফল, জয়িত্রী ও পেঁয়াজ আদা রসুন সহ বাকি সমস্ত উপকরণ একসঙ্গে বেটে নিতে হবে। এরপর আলু ও পেঁয়াজ ভাজার তেলেই সমস্ত বাটা মশলা দিয়ে ভালো করে কষতে হবে! সাথে পরিমাণ মতো নুন মেশাতে হবে। মশলা কষানোর পর তেল ছেড়ে গেলে ওতে দই মেশাতে হবে। তারপর ভাপানও এঁচোড় দিয়ে কষাতে হবে। কষানো হয়ে গেলে, একটি হাঁড়িতে ঘি মাখিয়ে তাতে একে একে সিদ্ধ বাসমতি চাল, এচোঁড় কষা, ভাজা আলু, আবার বাসমতি চাল, এঁচোড় কষা এইভাবে লেয়ার করে দিতে হবে। সব শেষে ওপর থেকে আলাদা করে রাখা ভাজা পেঁয়াজ, গোলাপ জল ও মিঠা আতর দিয়ে হাঁড়ির মুখ ভালো করে বন্ধ করে ধীমে আঁচে পাঁচ মিনিট রেখে নামিয়ে নিলেই তৈরি গরমা গরম এঁচোড়ের বিরিয়ানি।
Discussion about this post