বাংলাদেশ বরাবরই পিঠের রকমারি সম্ভার। সেই ঠাকুমা জেঠিমার সময় থেকে পিঠের সম্ভারে নিত্যনতুন পিঠের নাম মুক্ত হয়েই চলেছে। পৌষ মাস যেন হাজির হয় খেজুর গুড়ের গন্ধ আর রঙবেরঙের পিঠে নিয়ে। পিঠের বাহারে বাঙালি কতটা আহার প্রিয় তা সহজেই অনুমেয়। সে শরীয়তপুরের বিবিখানা, নোয়াখালীর পান্তুয়া কিংবা পাবনার দোলে পিঠেই হোক না কেন।
ঢেঁকির আওয়াজ, চালের গুঁড়োর মিষ্টি সুঘ্রাণে পৌষ আসক্ত বাড়ির উঠোন। পৌষের কুয়াশা মাখানো সকাল আর খেজুর গুড়ের কড়া পাকের মাদকতায় নেশাগ্রস্ত বাংলার শীত। শহুরে ব্যস্ততায় ধূসর আকাশে পৌষের এমন সকাল সিবিআই তদন্ত করলেও পাওয়া যাবে না। যুগ পাল্টেছে। ধানের গোলার ছবি খুঁজতে গুগলই ভরসা। তবে যুগের বিবর্তনেও কিছু জিনিস এখনো স্থায়ী। এই যেমন চিতই, দোলে, পাটিসাপটা! দোলের জনপ্রিয়তার পিছনে অবশ্যই এর সাধাসিধে স্বভাব। দুধ পুলি, গোকুল, নকশী পিঠের মাঝে দোলে যেন একটু বেশিই সহজসরল। উপকরণও তেমন বেশি লাগেনা। খেতেও সুস্বাদু, অনেকটা পায়েসের মতো। প্রস্তুত প্রণালীতেও তেমন বিশেষ কোনো মার-প্যাঁচ নেই। তবে এমন নামকরণ কেন? অনেকেরই ধারণা চালের গুঁড়ো মেখে আটার দলা তৈরী করে এই পিঠে প্রস্তুত করা হয়, সেখান থেকেই এর নাম দোলে। বাড়িতে হঠাৎ অতিথির আগমন ঘটলে, চটজলদি প্রস্তুত করা যায় দোলে।
উপকরণ হিসেবে লাগবে এক কাপ চালের গুঁড়ো, ১ লিটার দুধ, ৩০০ গ্রাম পাটালি গুড়, এলাচ, তেজপাতা, এক কাপ ঈষৎ উষ্ণ জল। একটি থালায় এক কাপ চালের গুঁড়ো নিতে হবে। এবার ঈষৎ উষ্ণ জলের কাপ থেকে আঙুল দিয়ে জল দিতে হবে। সামান্য পরিমাণ জলি যথেষ্ট। এবার চালের গুঁড়ো সেই জলে মাখতে হবে। জলে ভেজানো আটা সামান্য দানাদার হলেই চলবে। এই দানাদার চালের গুঁড়ো আলাদা করে ৫-১০ মিনিট রাখতে হবে। এবার একটি কড়াই এ বেশি আঁচে এক লিটার দুধে তেজপাতা, এলাচ দিয়ে ভালো করে ফোটাতে হবে। তারপর সেখানে গুড় দিতে হবে। দুধ সামান্য ঘন হয়ে এলে দানাদার চালের গুঁড়ো যুক্ত করতে হবে। ব্যস পাক দিতে দিতে অনেকটা পায়েসের মতো হয়ে এলেই প্রস্তুত দোলে পিঠে। উপকরণ আর প্রস্তুত প্রণালী দেখে বোঝাই গেল কেন দোলে পিঠে এত জনপ্রিয়! তাহলে এই পৌষ পার্বণে পাটিসাপটা, পুলির ভিড়ে দোলেও জায়গা করে নিক!
Discussion about this post