ষোলো শতকের মাঝামাঝি সময়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদির রাজা নবরঙ্গ রায় জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গাপুজো আয়োজন করতেন। পুজোর সেরা ঢাকীর খোঁজে বিক্রমপুর পরগণাসহ বিভিন্ন জায়গার বাদকদের আমন্ত্রণ জানাতেন তিনি। নৌকা করে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের তীরে কটিয়াদির যাত্রাঘাটে হাজির হতেন অসংখ্য ঢাকী। একে একে সবার বাজনা শুনতেন রাজা নবরঙ্গ রায়। সেরা বাদক দলকে পুরস্কার দিতেন। সেই থেকেই কটিয়াদির যাত্রাঘাটে ঢাকের হাট শুরু।
এরপর আঠারো শতকে পাশের মসুয়া গ্রামে চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরিকিশোর রায় চৌধুরীর বাড়িতে মহা সাড়ম্বরে দুর্গাপুজো হতো। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পুজোর সংখ্যা। তখন বিভিন্ন মণ্ডপে বাজনার প্রতিযোগিতাও হতো।একসময় স্থানীয় জমিদারদের মধ্যে ঢাকের হাট নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। অবশেষে যাত্রাঘাট থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে আড়িয়ালখাঁ নদের তীরে কটিয়াদি পুরান বাজারে নিয়ে আসা হয় ঢাকের হাট।
বৃহওর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক দুর্গাপুজোর আয়োজক এ হাট থেকে পুজোর দিন দুয়েক আগে ভাড়ায় বায়না দিয়ে বাদ্যযন্ত্রীদের নিয়ে যান। আজও বিক্রমপুর ভাটি অঞ্চল ও কুমিল্লার হাওর অঞ্চল থেকে শত শত বাদ্যযন্ত্রী এ হাটে আসেন। ঢাকঢোল, সানাই, বিভিন্ন ধরনের বাঁশি, কাঁসি, করতাল সহ হাজারো বাদ্যযন্ত্রের পসরায় হাট উপচে পড়ে। যন্ত্রীরা দলে দলে, দফায় দফায় বাজায় বাদ্যযন্ত্র। গোটা এলাকার আকাশ-বাতাস কেঁপে ওঠে বাজনার মায়াবী সুরে।
নরসিংদী থেকে আসা সানাই বাদক শ্যামল কান্তি দাস বলেন, “প্রতি বছর কটিয়াদির ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাটে আমরা আসি। এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় পূজোর ঢাক বাজাতে চলে যাই। গত বছর পাঁচ দিনের চুক্তিতে বিজয়া দশমী পর্যন্ত সিলেটের একটি পুজো মণ্ডপে চুক্তি করি।”
Discussion about this post