“শীত এসেছে খেজুর রসে/ শীতল ভাপা পিঠায়, শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে/ খেজুর রসের মিঠায়।” যদিও বাংলায় শীত বিদায় নিয়েছে। তবে শীতকালের পেট পুজোর রেশ থেকে যায় বসন্তেও। পিঠেপুলি তৈরিতে খেজুর গুড়ের জুড়ি নেই, কী বলুন? বাড়িতে পিঠে আর খেজুর গুড়ের কেমিস্ট্রিটাকে সেই কবে থেকেই বাঙালিরা একেবারে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে আসছে। আর এই খেজুর গুড়ের জোগান দেওয়ার জন্য হেমন্তের শুরু থেকেই গ্রাম বাংলায় প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়ে যায়।
বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন গঞ্জের চিত্রটিও ব্যতিক্রম কিছু নয়। এই জেলার সুস্বাদু ও সুগন্ধি খেজুর গুড়ের কদর দেশের সীমানা পেরিয়ে পাড়ি দিয়েছে বিদেশেও। তাই সেদিক দিয়ে বলা ভালো দেশের অর্থনীতিতে চুয়াডাঙ্গার খেজুর গাছের অবদানও রয়েছে বেশ খানিকটা। এই বছর অগ্রহায়ণের শুরু থেকেই গাছিরা লেগে পড়েছেন রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কাজে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে এসব গুড় চলে যাচ্ছে দেশ- বিদেশের নানা জায়গাতে। কৃষি বিভাগের আশা পূরণ করে এবার ২০ কোটি টাকার খেজুর গুড় বিক্রি হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গায় স্থানীয়ভাবে ‘নলি’ নামে পরিচিত খেজুর গুড়ের বড় হাট বসে সরোজগঞ্জ বাজারে। এটি দেশের অন্যতম বড় খেজুর গুড়ের হাট। শীত এলেই দেখা যায়, শহুরে ভেজাল গুড়ের বদলে মানুষ দলে দলে গ্রামে ছুটে যান টাটকা খেজুর রস বা ঝোলা গুড় ও পাটালির লোভে। সকালে গাছিরা যখন রস সংগ্রহ করে মাটির চুলায় জ্বাল দেন, তখন গ্রামের আশপাশের বাতাস গুড়ের সে কী মন মাতানো গন্ধ! ম ম গন্ধে ভরে ওঠে চারিদিক। খেজুর রসের বাড়তি চাহিদা থাকে বিশেষত সন্ধ্যার পর। অবশ্য সেখানকার ব্যবসায়ীদের মতে, খাঁটি গুড় কিনতে সকাল থেকেই ভিড় করেন ক্রেতারা।
জনপ্রিয়তা থাকার সত্ত্বেও চুয়াডাঙ্গার চাষীরা অভিযোগ করেন, বাংলার ঐতিহ্য খেজুর গাছ এক শ্রেণীর পরিবেশ ধংসকারী ইটভাটা মালিকের লোলুপ দৃষ্টিতে পড়েছে। তারা ইট পোড়াতে ভাটায় ব্যাপক হারে ব্যবহার করছেন খেজুর গাছ। যার ফলে দিন দিন খেজুর গাছের পরিমাণ ব্যাপকহারে কমে যাচ্ছে। তাই আগের মতো আর খেজুর গুড় উৎপাদন হচ্ছে না। প্রতিদিন শত শত গাছ ইটভাটায় পুড়িয়ে তারা চরম ক্ষতি করছেন। তাই তাদের আশঙ্কা, ইট ভাটায় খেজুর গাছ পোড়ানো বন্ধ না করলে বিশ্বখ্যাত খেজুর গুড়ের এই ঐতিহ্য একদিন একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাবে।
Discussion about this post