বিয়ের অনুষ্ঠান হোক বা জন্মদিন। বাঙালির শেষ পাতে একটু মিষ্টি না হলে ঠিক জমে না। হরেক রকম সেই মিষ্টির ভিড়ে যদি রসগোল্লা থাকে তো কথাই নেই! রসগোল্লা ও বাঙালির এই সম্পর্ক কিন্তু আজকের নয়। তার হিসেব খুঁজতে গেলে যেতে হবে সেই ১৮৬৮ সালে। বাগবাজারের নবীন ময়রা তখন সবে মিষ্টি বানানোয় হাত পাকাচ্ছেন। একদিন ছানার গোল্লা পাকিয়ে চিনির শিরায় ফেলে তৈরি করে ফেললেন এক অপূর্ব বস্তু। আর বাঙালি পাতে পেল রসগোল্লা। এবার বর্ধমান শহরে আবির্ভাব ঘটেছে এক নতুন রসগোল্লার। যার নাম চিলিগোল্লা। অর্থাৎ ঝাল আর মিষ্টির এক অদ্ভুত মেলবন্ধন।
বর্ধমানের নেতাজি মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ঘটিয়েছে এই অদ্ভুত মেলবন্ধন। শহরের প্রাণকেন্দ্র কার্জন গেট থেকে বিসি রোড ধরে হাঁটা পথ। কয়েকটা দোকান পেরিয়ে রাস্তার ডানদিকে তাকালেই দেখবেন হাসিমুখে বসে আছেন সৌমেন দাস। আর এই মানুষটির তৎপরতায় তৈরি হয়েছে চিলিগোল্লা। ভাবছেন কীভাবে তৈরি হয় এই মিষ্টি? প্রথমে বীজমুক্ত কাঁচালঙ্কা আর কিউবি ফল পেস্ট করে নেওয়া হয়। তারপর সেই পেস্ট মাখা হয় ছানার সঙ্গে। বাকি পর্ব সাধারণ রসগোল্লা তৈরির মতোই। অর্থাৎ ছাঁকা এবং রসে ডোবানো। এরপর রয়েছে ডেকরেশন পর্ব। পাত্রে চিলিগোল্লা রাখার পর উপরে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বুকচেরা কাঁচালঙ্কা। কিউবি ফলের দায়িত্ব থাকে রসগোল্লার সবুজ রঙ আনার জন্য।
বর্ধমান শহরের এই প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকানটি কিন্তু আজকের নয়। দোকানের প্রতিষ্ঠা ১৯৩৮ সালে। নাম-মাহাত্ম্যের পিছনেও রয়েছে ইতিহাস। সে-বছর নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বর্ধমান পৌরসভার একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। বিসি রোড দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি আচমকাই ঢুকে পড়েন এই দোকানে। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের ছবি এখনও জ্বলজ্বল করছে নেতাজি মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের দেওয়ালে। আর তারপর থেকে সময়ের প্রবাহের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খ্যাতি বজায় রাখার চেষ্টা করছে এই মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। তাদেরই নয়া উদ্যোগ এই কাঁচালঙ্কার রসগোল্লা।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – Hapus-Hupus, তথ্য ঋণ – বঙ্গদর্শন
Discussion about this post