খেজুর রসের জাত গুড় বলে পরিচিত নলেনের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। শীত মরশুমে বঙ্গের মিষ্টান্ন শিল্পে তার অবদানও নেহাৎ কম নয়। সব মিষ্টির নামের আগে তিন অক্ষর জুড়ে দিলেই কিস্তিমাত! আর ‘নলেনের পাটালি’ মানে তো কোনও কথা হবে না। বাঙালির পিঠে পার্বনের সঙ্গে তার দহরম-মহরম যুগযুগ ধরে। কিন্তু নলেনের ‘বংশজাত’ ভাল্লি পাটালি গুড়কে ক’জনই বা চেনেন? চেনার কথাও নয়। তবে তাকে এককালে চিনতেন ব্রিটিশরা। আসলে, গোরারা চিনেছিলেন ‘গোরা’কে!
এখন আর ব্রিটিশরা নেই। টাকির সেই ‘গোরা’ পাটালিও কালের গর্ভে। বাঙালির স্মৃতিভ্রংশের এ এক বড় ট্র্যাজেডি! ভাল্লির পাটালিকে নতুন করে চিনিয়ে দেওয়ার সময় নেই কারও হাতে—না সরকারের, না জনগণের। নলেনের মাহাত্ম্য প্রচারে যে কসরত চলে শীত ভর, তার ছিঁটেফোটাও ভাল্লির গায়ে লাগলে টাকির গুড়শিল্প বইত অন্যখাতে। এখন শুধু পর্যটকদের আঁকড়ে ঔপনিবেশিক শাসনের স্মৃতিকে বয়ে বেড়াচ্ছে এই গুড়।
সীমান্তবর্তী উত্তর ২৪ পরগনার টাকি-হাসনাবাদ, মিনাখাঁ, সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জসহ একাধিক জায়গায় খেঁজুর গাছ কাটা হয় রস সংগ্রহের জন্য। সেই খেঁজুর গাছের রস শিউলিরা বাড়িতে জ্বাল দিয়ে সুস্বাদু নলেন গুড় তৈরি করেন। তারপর সেই নলেনগুড় কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে যায়। খেজুর রস ফোটানোর পর একটু গাঢ় হয়ে এলে মাটির কলসিতে ঢেলে দেওয়া হয়। তার পর দীর্ঘক্ষণ কাঠের ঝাঁকি দিয়ে ঘষতে লাগে। ঘণ্টাখানেকের পর গুড়ের আকার ধীরে ধীরে সাদা হতে থাকে এবং জমাট বাঁধে। এক কেজি ভেল্লি বানাতে ৫ থেকে ৬ লিটার রসের প্রয়োজন। ফলে দাম একটু বেশি পড়ে। এখনও সেভাবে প্রচার না পাওয়ায় ভাল্লির ব্যবসা মূলত পর্যটক নির্ভর। টাকি ঘুরতে এসে ভাল্লি কিনে ব্যাগে ভরেননি, এমন লোকের সংখ্যা বোধহয় খুবই কম।
Discussion about this post