আমরা যারা নব্বইয়ের দশকে জন্মেছি বা বেড়ে উঠেছি, কিছু জিনিসের প্রতি এক অদম্য আকর্ষণ কাজ করে তাদের আজও। সেটা যদি খাবার কোনও বস্তু হয়? তাহলে সে আকর্ষণ বেড়ে হয় দ্বিগুণ। ছোট্ট বেলায় আমাদের প্রত্যেকেরই মিষ্টি জিনিস বা ডেজার্টয়ের প্রতি আলাদাই এক টান থাকে। বিশেষ করে সেটা যদি হয় ফ্রুট কেক।।ব্যাস! তাহলে তো একেবারে সোনায় সোহাগা! স্কুলের টিফিন বক্সই হোক বা বিকেলের অল্প খিদে, হাতের কাছে কেক থাকলে তো আর কথাই নেই। সব খিদে মেটাতে সে একাই ওস্তাদ! আবার ছেলেবেলা পেরিয়ে পা রাখা যৌবনের চৌকাঠে। অবসরে চায়ের ফাঁকে তখনও তার চাহিদা কিন্তু এতটুকু কমেনি। বরং দিনের পর দিন তা উত্তরোত্তর বাড়ছে। ছোট ও বড়বেলা ঘিরে আজও আমাদের এরকমই নস্টালজিয়ায় ঘিরে রেখেছে যে, তা হল আমাদের সব্বার প্রিয় ‘বাপুজি কেক’।
বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই, তবু জনপ্রিয়তার চাহিদায় অন্য টিফিন কেকদের এখনও গুনে গুনে দশ গোল দেবে এই বাপুজি। আর এই কেকের জন্যই এক সময় হা পিত্যেশ করে বসে থাকতাম আমরা। বয়সে তখন কুচো, ইচ্ছে মত যখন ইচ্ছে কেক কিনে থোড়াই খেতে পারতাম! একমাত্র বায়নার জায়গা ছিল স্কুলের টিফিন বাক্স। সেখানের একমাত্র অতিথি হিসাবে বাপুজি কেকের ঠাঁই মেলা চাই-ই চাই। অবশ্য টিফিন বাক্সের বাইরে বেরিয়ে আরেকটা জায়গাতেও এক হদিশ পেতাম আমরা ছোটোরা। তার সঙ্গে অবশ্য জড়িয়ে রয়েছে আরেক নস্টালজিক গল্প!
প্রতিবছর আমাদের পাড়ায় বেশ ধুমধাম করেই পালিত হত স্বাধীনতা দিবসের উৎসব। সেই দিন পতাকা উত্তোলনের পর হত নিয়মমাফিক কুচকাওয়াজ। প্রত্যেক বছর সকাল সকাল আমরা তাই ভীড় জমাতাম পাড়ার সেই মাঠে। অবশ্য আমাদের মতো খুদেদের জন্য সেদিনের আকর্ষণ ছিল এক্কেবারে অন্য। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান মেটার পর প্রতি বছরই আমরা হাতে পেতাম কিছু লজেন্স আর আমাদের পছন্দের সেই বাপুজি কেক। ব্যাস! আর কি! তার-ই টানে সক্কালবেলাতেই ঘুম থেকে উঠে ছুটতাম মাঠে। অপেক্ষায় থাকতাম ঠিক কখন হাতে পাব সেই কেক! অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকতে পারলেও কেক নিতে কিন্তু কোনোভাবেই ভুল হত না আমাদের। এ অভিজ্ঞতা শুধু আমার একার নয়, এ হল নব্বইয়ের দশকের প্রায় প্রত্যেক ছেলেপুলের ছোট্টবেলার এক টুকরো নস্টালজিয়া।
শৈশব পেরিয়ে কৈশোর থেকে পা দিলাম যৌবনের ঘরে। বাপুজি কেকের প্রতি ভালোবাসাটা কিন্তু তবুও একবিন্দুও কমেনি আমাদের। নানা গল্প-উপন্যাস পেরিয়ে জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ভালোলাগার জায়গা দখল করে রয়েছে লাল-সবুজ-হলুদ কাগজের মোড়কে জড়ানো কেকের সেই প্যাকেট। সে চাহিদা এখনও অব্যাহত। দাম মাত্র ছয়, তাই সামর্থ্যের মধ্যেই মেটে সাধ্য। আট থেকে আশি, যে কারোরই রসনা তৃপ্তির সন্ধান মেলে বাপুজিতে। এখনও বহু জায়গায় স্বাধীনতা দিবসের দিন বাচ্চাগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হয় বাপুজি কেক।বর্তমানে নামী-দামী রকমারি ভীনদেশি কেকের মাঝেও তাই নিজের স্বতন্ত্র এক জায়গা ধরে রেখেছে এই কেক। ঠিক সেই জায়গাতেই ছোট্টবেলার মনকেমনের কিছু রঙিন স্মৃতির মোড়কে আমাদের আজও জড়িয়ে রেখেছে সে।
Discussion about this post