পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রান্তে থাকা সকল আদিবাসী জনজাতির সারাবছর কোনো না কোনো পরব লেগেই থাকে। বিভিন্ন পরবের বিভিন্ন রীতিনীতি হলেও যে দুটো জিনিস ছাড়া তাদের পরব সম্পূর্ণই হয় না, তা হল–নাচগান আর হাঁড়িয়া পান। লোকসঙ্গীতের মধুর সুরেই রয়েছে, “হাঁড়িয়া খাঁয়ে মাতাল হব।” আসলে পরবের দিনে হাঁড়িয়া খাওয়া সমস্ত আদিবাসী জনজাতির ঐতিহ্য। এই হাঁড়িয়া তৈরির উপকরণ হিসেবে আমরা প্রায় সকলেই জানি ভাতের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা রয়েছে। তবে আরেকটি যে উপাদান ছাড়া হাঁড়িয়া বা এই ধরনের যে কোনো পানীয় তৈরি অসম্ভব তা হল বাখর। বলা যায়, এই বাখর তৈরি আসলে একটি লুপ্তপ্রায় কুটির উদ্যোগ।
পশ্চিম বাংলার পশ্চিম প্রান্তে বিশেষত ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন এলাকাগুলিতে এখনও তৈরি হয় ভেষজ বাখর। এটি তৈরি হয় জঙ্গলের ভেষজ গাছের মূল-শিকড় ও ছাল, চালের গুঁড়ো এবং খড়ি মাটি ইত্যাদি মিশিয়ে। দেখতে হয় ঠিক ছোটো ছোটো লাড্ডু। বর্তমানে লাভের লালসায় ভেষজ গাছের বদলে বাখরে মেশানো হয় বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল। তবে এখনও কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে পুরনো পদ্ধতি মেনে কেমিক্যালের বদলে গাছ-গাছড়া দিয়েই তৈরি ভেষজ বাখর। মূলত দেশি মদ, হাঁড়িয়া, মহুয়া-এইসব পানীয় তৈরি বা ফার্মেন্টেশন বাখর ছাড়া অসম্ভব।
তবে শুধুমাত্র দেশি মদ তৈরিতেই যে বাখরের ব্যবহার হয় তা নয়, অন্যান্য ব্যবহারিক দিকও রয়েছে যথেষ্ট। চাষের সময় গবাদি পশুর শরীরের ব্যাথা কমাতে এবং তাদের কাজের সময় শক্তি বাড়াতে বাখর হল অতুলনীয়। আবার মাছ ধরার সময় ছিপে চার হিসেবে বাখর উৎকৃষ্ট। তবে কালভেদে এই জিনিস তৈরি করা যেমন কষ্টসাধ্য তেমনি সময়সাপেক্ষও বটে। গ্রীষ্মকালে তৈরী করতে সময় লাগে ৬-৭ দিন এবং শীতকালে ১০-১২ দিন। দাম সাধারণত ২৫-৩০ টাকা প্রতি কেজি আর বিশেষ ভেষজ বাখর হলে তার দাম প্রতি কেজি ৭০ টাকা।
Discussion about this post