কলকাতার রসগোল্লা, কৃষ্ণনগরের সরভাজা, ক্ষীরপাই এর বাবরসা। এদের মধ্যে প্রতিটি স্থানেরই বিশেষত্ব বলতে বাঙালির একান্ত প্রিয় কিছু মিষ্টির মূল ঠিকানা জায়গাগুলি। এগুলিকে মিষ্টান্নের গবেষণাগার বললেও অত্যুক্তি ঘটে না। মিষ্টির পরিচয়েই মান-যশ-খ্যাতি প্রাপ্তি ঘটেছে বেশ কিছু জায়গার। কিন্তু তাই বলে জায়গার নামেই মিষ্টি! যদিও জায়গার নাম বললে কিছুটা ভুল হবে, আদতে একটি জনপদের নামে। এতেই বা তমক কম কিসে? উদাহরণ মালদহের কানসাট। কানসাটের বর্তমান পরিচয়-খ্যাতি ‘মিষ্টি’ হিসেবে মিললেও আদতে এটি অধুনা বাংলাদেশের এক জনপদের নাম!
নাহ, আমতা আমতা করে লাভ নেই। ঝেড়ে কাশাই শ্রেয়। মহেন্দ্রনাথ সাহা নামক এক ব্যক্তি ওপার বাংলার শিবগঞ্জে ছিলেন মস্ত বড়ো মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী। তখন অবিভক্ত বাংলা, দেশে ইংরেজদের শাসন। মহেন্দ্র বাবুর ছেলে বিজয় কুমার সাহা ইংরেজ আমলেই চলে এলেন গৌড় বঙ্গে। মালদহে তৈরী করলেন মিষ্টির দোকান। বাবার তৈরী বিশেষ মিষ্টি নতুন দোকানেও প্রস্তুত করলেন। প্রস্তুত প্রণালীর খানিক তারতম্য ঘটলে বটে, কিন্তু তাতে মিষ্টির স্বাদ বেড়ে গেল দ্বিগুণ। মিষ্টির নামকরণ করলেন, শিবগঞ্জের এক জনপদের নামে, ‘কানসাট’। নতুন মিষ্টির দোকানের নামও দিলেন কানসাট মিষ্টির নামেই। ফুলের সুঘ্রাণে অলির আগমন যেমন স্বাভাবিক। এই মিষ্টির অভিনব স্বাদেও তেমনি ভক্তের তালিকা বাড়ল অল্প সময়েই। দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ল সুখ্যাতি। ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনিও যুক্ত হয়েছিলেন কানসাটের ভক্তের তালিকায়।
এই দোকান এখনো আছে। ইংরেজ বাজারের মকদমপুরের বাপ-ঠাকুরদার ব্যবসা আজও জমিয়ে রেখেছেন দুই ভাই জয়দেব সাহা আর বিশ্বজিৎ সাহা। তাঁদের দোকানে কানসাট বাদেও পাওয়া যায় অন্যান্য মিষ্টি। তবে কানসাটের চাহিদাই বেশি। যে মিষ্টির স্বাদে এক কালে মজেছিল দেশের প্রধানমন্ত্রী তার বিশেষ উপকরণ থেকে প্রস্তুত প্রণালী খানিক তো গোপন হবেই। সেরা মিষ্টি তৈরীর জন্য হাট থেকে বাছাই করা খাঁটি ক্ষীর কিনে আনেন তাঁরা। আর মিষ্টি তৈরীর ছানা প্রস্তুত করা হয় কাঠের উনুনে। একদম সঠিক আঁচে জোরকদমে চলে ছানা প্রস্তুতি। তার সঙ্গে ভাজা ক্ষীরের মিশ্রণ। এই কানসাটের সাথে অন্য দোকানের কানসাটের স্বাদের মিল পাওয়া একপ্রকার দুঃসাধ্য কাজ। প্রতিটি মিষ্টির দাম ৭-১০ টাকা।
বাংলার বুকে এত রকমের মিষ্টির ভান্ডার দেখলে তাজ্জব হতেই হয়। রসনার তৃপ্তি মেটাতে কী হারে পরীক্ষা নীরিক্ষাই যে চালিয়ে ছিল বাঙালি।
Discussion about this post