গুজিয়া! নামটা শুনলেই একরাশ ছেলেবেলার স্মৃতি জাপটে ধরে আমাদের। রঙটা সাদা হলেও আমাদের ছোটবেলার নানা রঙিন স্মৃতির সাক্ষী সে। ছোটবেলায় ঠাকুরের থালা থেকে যে মিষ্টি সবথেকে বেশি চুরি করে খেয়েছি, তা এই গুজিয়াই। যদিও মিষ্টি হিসাবে গুজিয়াকে কেউই সেরকমভাবে পাত্তা দেন না। মিষ্টির দোকানে হাজারও রকমারি মিষ্টির ভিড়ে থেকেও এককোণে একলা হয়ে পড়ে থাকে সে। তবে একটি জায়গায় গুজিয়ার চাহিদা এখনও গুণে গুণে দশ গোল দেবে বাকি মিষ্টিদের। পুজোর প্রসাদ বা নৈবেদ্য। হ্যাঁ, তা সে বাড়ির পুজোই হোক বা পাড়ার। প্রসাদের থালায় গুজিয়ার দেখা না মিললে যেন প্রসাদের তালিকা সম্পূর্ণই হয় না। বাকি মিষ্টির তুলনায় দামও কম, কাজেই প্রসাদ হিসাবে ব্যবহারে ‘সাধ্য’ কখনও বাধ সাধতে পারে না। তাই রমরমিয়ে চলে গুজিয়ার বাজার।
সন্দেশের গুঁড়ো, ময়দা, দুধ মিশিয়ে গুজিয়ার জন্ম। পোশাকি নাম ছিল নাকি ‘আংটি সন্দেশ’। তা থেকে কিভাবে যে গুজিয়ায় এসে ঠেকল, সে ইতিহাস আজ আর জানা যায় না। লোকমুখে শোনা যায়, ‘শিউ-জী’ বা শিব ঠাকুরের প্রিয় মিষ্টি নাকি ছিল এই গুজিয়া। গুজিয়া এবং ভাঙ এই নিয়েই নাকি তাঁর দিন কাটে। ভাঙের সঙ্গে গুজিয়ার মেলবন্ধন যে কী জিনিস, তা যদিও একমাত্র নেশাড়ুরাই বলতে পারবে। তবে এ শহরের বুকেও বহু নেশাড়ুদের কাছে নেশার সামগ্রী ছাড়া আরও একটি জিনিসের দেখা প্রায়শই মেলে। তা হল এই গুজিয়া। শহরের ছোট বড় নানা দোকানেই দেখা মিলবে তার। তবে স্পেশাল হল বড়বাজারের গুপ্তার গুজিয়া। আহা! যেমন স্বাদ, তেমন গন্ধ। গোলাপজল মেশানো নরম তুলতুলে একটি গুজিয়া মুখে দিলেই যেন মিলিয়ে যায়! সে স্বাদ একবার যে খেয়েছেন, আর ভুলতে পারবেন না। তবে পাড়ার দোকানের ছোট্ট রেকাবিতে সাজানো গুজিয়া গুলিই বোধহয় সবথেকে বেশি প্রাধান্য পায়। পুজো-আচ্চায় চটজলদি নিয়ে আসা যায়। দামও সাধ্যের মধ্যে। ঠাকুরের থালায় দেওয়া মাত্রই বাড়ির ছোটদের পেটে চলে যায় নিমেষেই। এমনটাই এর মায়া।
তবে শুধু দোকানের কেনাই নয়, বাড়িতেও চটজলদি বানিয়ে নেওয়া যায় গুজিয়া৷ উপকরণও খুবই সামান্য। দুধ, চিনি বা নলেন গুড় এবং টুকরো সন্দেশের গুঁড়ো। চাইলে গোলাপ জলও দিতে পারেন। প্রথমেই একটি বড় বাটিতে দুধ ফোটাতে হবে। দুধ ঘন হয়ে এলে তার সঙ্গে চিনি, নলেন গুঁড় এবং সন্দেশের গুঁড়ো যোগ করতে হবে। এরপর আরও কিছুক্ষণ ফোটানোর পর মিশ্রণটি কিছুটা শক্ত হয়ে আসবে। তখন তা অন্য একটি পাত্রে ঢেলে ইচ্ছে মতো গুজিয়ার আকারে গড়ে নিতে হবে। যদি চান তাহলে এর মধ্যে গোলাপজল বা কেশরও যোগ করতে পারেন। ব্যাস, তৈরি আপনার গুজিয়া। ছোটবেলার সেই আবেগকে এবার উপভোগ করতে পারেন নিজের হাতেই৷ মিষ্টির দোকানে যতই ব্রাত্য হোক না কেন, স্বয়ং শিবের পছন্দ বলে কথা! আপনার বাড়ির প্লেটে তাই রাজকীয় আসন নিতেই পারে সে। কি বলেন?
Discussion about this post