শহরের বা শহরতলীর অলিতে-গলিতে হাঁকডাক পেরে, অথবা গ্রাম্য দুপুর বা বিকেলে ঠেলাগাড়িতে করে এই বিশেষ মিষ্টি বিক্রি করে থাকেন হকাররা। ছোটবেলা স্কুল থেকে ফেরার পথে ঠুন ঠুন ঘন্টা আর কাচের বাক্সে সাজানো রঙিন তুলোর কথা মনে পড়ে? কিংবা শহরে শীতের মেলার মধ্যমণি একটি স্টল। যাকে ঘিরে রেখেছে অসংখ্য কচিকাঁচার দল, সকলের অবাক চোখ স্টলের মধ্যের মেশিনের দিকে, মেশিনে ঘুরে ঘুরে তৈরি হচ্ছে সকলের লোভনীয় একটি মিষ্টি। এই রঙিন মিষ্টি কিন্তু রসগোল্লাও নয়, সন্দেশও নয়। এ হল ‘হাওয়াই মিঠাই’। যার, অপর নাম, বা বলা ভালো সর্বজনগাহ্য নাম ‘বুড়ির চুল’।
চৌদ্দ শতকে ইটালিতে চিনি দিয়ে তৈরি এক ধরণের খাবারের প্রচলন ছিল। ঘরোয়া ভাবে চিনির রস ঘন করে, সেই ঘন চিনির রস টেনে টেনে সুতো তৈরি করা হত। ঠান্ডা হলে তৈরি হত বিশেষ খাবার। তবে সেই খাবার বর্তমান হাওয়াই মিঠাইয়ের মত এত সূক্ষ্ম ছিল না। সূক্ষ্ম করার জন্যই সম্ভবত ১৮৯৭ সালে মার্কিন ডাক্তার উইলিয়ম মরিসন ও জন সি. ওয়ারটন প্রথম হাওয়াই মিঠাই তৈরির মেশিন বানালেন। তখনও কিন্তু এই খাবার বিখ্যাত হয়ে ওঠেনি। বিখ্যাত হল তখন, যখন ১৯০৪ সালে মরিসন এবং ওয়ারটন তাঁদের মেশিনে তৈরি হাওয়াই মিঠাই নিয়ে হাজির হলেন সেন্ট লুইসের বিশ্ব মেলায়। মেলার প্রথম দিনই ২৫ সেন্ট করে ৬৮ হাজার ৬৫৫ বাক্স হাওয়াই মিঠাই বিক্রি হয়েছিল। এরপরেই ক্রমে হাওয়াই মিঠাই বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পেলো।
দেখতে তুলোর মতো বলে আমেরিকায় এর নাম ‘কটন ক্যান্ডি’। এমনকি আমেরিকায় ৭ ডিসেম্বর দিনটি ‘জাতীয় কটন ক্যান্ডি ডে’ হিসেবেও পালিত হয়। এছাড়া, আরও বিভিন্ন জায়গায় ‘ক্যান্ডি ফ্লস’, ‘স্পুন সুগার’ ইত্যাদি নামেও পরিচিত এই মিস্টি। তবে ইউরোপ, আমেরিকার জন্যই আমাদের দেশেও আমরা বুড়ির চুল খাই, তা কিন্তু নয়। আমাদের দেশেও চিনির রস দিয়ে সোনপাপড়ি তৈরির প্রচলন প্রাচীনকাল থেকেই ছিল। বিভিন্ন দেশের খাবার তৈরির পদ্ধতি, ভাবনার সঙ্গে মিলে মিশে আমাদের দেশেও হাওয়াই মিঠাই তৈরি হয়, তবে ইউরোপ, আমেরিকার মত আমাদের দেশে এর বৃহৎ বাজার নেই।
মুখে দিতেই হাওয়া হয়ে যায় বলেই সম্ভবত এর নাম ‘হাওয়াই মিঠাই’। তাছাড়া, খেতে খুব মিষ্টি হলেও, যন্ত্রে তৈরি হাওয়াই মিঠাইয়ে চিনি থাকে খুবই সামান্য। আর হাওয়াই মিঠাই যে একবার চেখেছে, বা দেখেছে, তাঁকে নিশ্চয়ই ‘বুড়ির চুল’ নামের কারণ বলে দিতে হবে না! এও এক প্রকার নিশ্চিত, যে শরতের পেঁজা তুলোর মত গোলাপি, সাদা, নীল রংবেরঙ্গের বুড়ির চুল দেখলে ছোটবড় সকলেরই জিভে জল আসেই। হাওয়াই মিঠাই যেন মিষ্টি এক একটুকরো বিস্ময়! ছোটবেলার হারিয়ে যাওয়া নস্টালজিয়া!
Discussion about this post