বাঙালির ক্যালেন্ডারে এখন শুরু রথের সাজো সাজো রব। বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন রূপে সেই প্রস্তুতি তুঙ্গে। আবার রাজ্যের নানা জায়গায় এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে নিজস্ব বিশেষ কিছু ঐতিহ্য বা রীতিনীতি মেনে। তেমনই হাওড়ার আমতা-২ ব্লকের অমরাগড়ী গ্রামের রায় বাড়ির রথযাত্রায় রয়েছে প্রায় ৩০৩ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যের ছোঁয়া। রয়েছে বিশেষ এক নিজস্বতাও। রথ আসার বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই রায় বাড়িতে শুরু হয়ে যায় মহা ধূমধাম। প্রতি বছর নতুন সাজে ও নতুন রঙে রথকে সাজিয়ে তোলাই রায়বাড়ির রীতি।
কথিত আছে চারশো বছর আগে মুর্শিদাবাদ থেকে আগত ক্ষত্রিয় মাহিষ্য রায় পরিবারের হাত ধরেই তৈরি হয়েছিল এই গ্রাম। পরিবারের সদস্য রামনারায়ণ রায় ব্রিটিশদের কাছ থেকে বর্ধমান জমিদারির একটা অংশ হিসাবে এই গ্রামের ইজারা নিয়ে রায় এস্টেট স্থাপন করেন। গ্রামে সমৃদ্ধি ও প্রতিপত্তি ধরে রাখার জন্য সেসময় বেশিরভাগ জমিদার বা বিত্তবান হিন্দু পরিবার নিজের এলাকায় দুর্গাপুজো, রথযাত্রা ও রথের মেলা আয়োজন করত। রামনারায়ণ রায়ও তাই করলেন। আনুমানিক ৩০০ বছরের বেশি সময় আগে শুরু হয়েছিল রায়বাড়ির রথযাত্রার।
এই রথের বিশেষ নিজস্বতাটি হল এখানে রথে জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামকে দেখা যায় না৷ রথে চড়েন রায় বাড়ির কুলদেবতা শ্রীধর রঘুনাথ জিউ। বহু পুরনো কাঠের তৈরি রথ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় টিনের বা লোহার তৈরি রথের চল দেখা যায় এখন। কিন্তু হাওড়া জেলার প্রাচীন রথগুলি যেখানে আজও কাঠের কাঠামো বজায় রেখেছে তাদের মধ্যে অন্যতম পুরনো হল এই অমরাগড়ির রথ। জানা গেছে, তিনশো বছরেরও বেশি প্রাচীন এই রথটি এখনও অব্ধি মোট তিনবার সংস্কার করা হয়েছে। রথের ঘর থেক কয়েকশো মিটার দূরে মেলাপ্রাঙ্গণ পর্যন্ত টান পড়ে রথের রশিতে।
এতবছর ধরে গোটা অমরাগড়ি গ্রামের সবচেয়ে বড় গ্রামীণ মেলার আসর বসে আসছে এই রথের মেলাকে কেন্দ্র করে। এই গ্রামের মানুষ তো বটেই, পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি গ্রামের বহু মানুষ ভিড় জমান এই রথের মেলায়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলার জৌলুস কমেছে ঢের, তবে ঐতিহ্য ধরে রাখতে ভোলেনি আশেপাশের গ্রামের মৃৎশিল্পীরা। মাটির তৈরি পুতুল ও খেলনা বিক্রি, বাঁশের তৈরি সরঞ্জাম বিক্রির মধ্য দিয়ে আজও রথের মেলার ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে চলেছেন তারা।
Discussion about this post