প্রাচীন বহু সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র আমাদের এই বাংলা। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে বহু প্রাচীন স্থাপত্য। বাংলার এই সংস্কৃতি মানচিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র পূর্ব বর্ধমানের গঙ্গা তীরের কালনা শহর। সুলতানি সময়কালের ইসলামী স্থাপত্য থেকে বৈষ্ণব সমাজের স্মৃতি বিজড়িত মন্দির আজও দেখা যায় শহরের আনাচে কানাচে। তবে সম্প্রতি ইতিহাসে মোড়া কালনার মুকুটে জুড়তে চলেছে আরো একটি পালক। কালনার জনপ্রিয় দুটি মিষ্টি নোড়া পান্তুয়া ও মাখা সন্দেশকে ‘জিয়োগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন ট্যাগ’ (জিআই)-এর অন্তর্ভুক্ত করার জন্য উদ্যোগী হল প্রশাসন।
কালনা শহরে রয়েছে ছানার দুটি বড় পাইকারি বাজার। কালনার মিষ্টি ব্যবসায়ীরা এখান থেকে ছানা নিয়ে থেকে তৈরি করেন রকমারি মিষ্টি। বহু বছর ধরে কালনার মিষ্টির সুনাম রয়েছে আশপাশের জেলায়। নোড়া পান্তুয়া এবং মাখা সন্দেশ কালনার অন্যতম প্রসিদ্ধ মিষ্টি। তবে এই দুই মিষ্টি নিয়ে তেমন কোনও প্রচার নেই। যার ফলে উপযুক্ত কদর পাচ্ছে না এই দুই মিষ্টি। কালনার এই দুই মিষ্টিকে রাজ্য তথা সারা দেশের সামনে তুলে ধরতেই জি আই ট্যাগের পরিকল্পনা করেছেন প্রশাসন। ইতিমধ্যেই কালনার নোড়া পান্তুয়া ও মাখা সন্দেশ নিয়ে বেশ কিছু তথ্য পাঠানো হয়েছে জেলা প্রশাসনের কাছে। আরও কিছু তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা শুরু হয়েছে।
সারা বছর পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের টানে কালনা শহরে আসা বহু পর্যটক এখানকার মাখা সন্দেশ এবং নোড়া পান্তুয়ার স্বাদ নিয়ে যান। মাখা সন্দেশ অনেক জায়গাতে পাওয়া গেলেও কালনার মাখা সন্দেশের স্বাদই আলাদা। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের মতে, “কালনার মাখা সন্দেশের কাছে রসগোল্লা বয়সে নেহাতই শিশু।” রসগোল্লার জন্মের অনেক আগে, প্রায় তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে মাখা সন্দেশের জন্য বিখ্যাত এই শহর। শীতের মরসুমে স্বাদ বাড়ানোর জন্য মাখা সন্দেশে মেশানো হয় নলেন গুড়।
অন্য দিকে, ছানা ও খোয়া ক্ষীর-সহ বেশ কিছু সামগ্রীর কেমিস্ট্রিতে তৈরি হয় নোড়া পান্তুয়া। ব্যবসায়ীদের অনেকেই এই দুই মিষ্টি নিয়ে রাজ্যের নানা প্রান্তে বড় মেলাতেও যোগ দেন। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, “জিআই ট্যাগ পেতে গেলে সেটি সম্পর্কে বেশ কিছু প্রামাণ্য নথি প্রয়োজন। এই দুই মিষ্টি নিয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে একজন আধিকারিককে। কত দিন ধরে এই মিষ্টিগুলি তৈরি হচ্ছে, মিষ্টির উপকরণ সহ বেশ কিছু এই দুই মিষ্টি সম্পর্কে জানার কাজ শুরু হয়েছে।” কাজে অগ্রগতির জন্য প্রশাসনের সাথে মিষ্টি ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি বৈঠকের ভাবনাও রয়েছে। এলাকার দুই মিষ্টির ‘জিআই ট্যাগ’-এর জন্য প্রশাসনিক উদ্যোগে খুশি ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, “জিআই ট্যাগ হলে কালনার এই দুই মিষ্টির পরিচিতি আরও বাড়বে। যার ফলে ভিন রাজ্যে ও এই মিষ্টির চাহিদা আরো বাড়বে। উপকৃত হবেন এই ব্যাবসার সাথে যুক্ত বহু মিষ্টি ব্যাবসায়ী ও কারিগররা।”
Discussion about this post