কলকাতা থেকে ৬৭ মাইল দূরত্বেই পড়ে বর্ধমান শহর। শহরে ছোট বড় নানান দোকান জুড়ে রয়েছে মিষ্টির সম্ভার। তাছাড়াও শহর বর্ধমানের বিখ্যাত সীতাভোগ মিহিদানার কথা কেই বা শোনেনি। শুধুই কি মিষ্টি! না, এই শহর মিষ্টি ছাড়াও নানান ভাস্কর্য স্হাপত্য ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে বরাবরই। তবে শুধু প্রাচ্যেই নয় পাশ্চাত্যের খাতায়েও এই শহর নিজের নাম নথিভুক্ত করে রেখেছে অনেক আগেই।
পাশ্চাত্যের সেই খাতা খুললেই জানা যায় ১৮ শতকের শেষ থেকেই বহু ব্রিটিশ পর্যটকদের লেখনিতে পাওয়া গিয়েছে ‘বর্ধমান স্টু’ নামক এক খাবারের নাম। ১৮২৮ সালে এক ব্রিটিশ অধিকারিক স্যার চার্লস ডি’ওয়েলির ‘টমর দ্য গ্রিফিন’ নামক প্যারোডিতেও পাওয়া যায় এই আইরিশ খাবারের নাম। যা তিনি রাইটার্স বিল্ডিংয়র অত্যন্ত দামি খাবার বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও ঐতিহাসিক ওয়াল্টার কে ফিলমিঙ্গারের ‘থ্যাকারস গাইড টু ক্যালকাটা’, এলিজা ফে’র ‘অরিজিনাল লেটারস টু ইন্ডিয়া’ এবং সাংবাদিক ক্রিস্টিয়ান ইসাবেল জনস্টন ‘দ্য কুক এন্ড হাউজওয়াইফ ম্যানুয়াল’ বইতেও বর্ধমান স্টু এর কথা জানা যায়।
তবে এই আইরিশ খাবারটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় এনাবেল লয়েডের ‘পিকনিক ক্রামবস্’ বইটিতে। সেই ব্যাখা অনুসারে সেই সময় শহর বর্ধমান ছিল ব্রিটিশ ভারতের জেলা সদর। এই সদরে যেসকল রাজকর্মচারী ও সৈন্যরা থাকতেন তাদের অন্যতম প্রিয় খাবার ছিল এই স্টু। এমনকি কর্মসূত্রে বর্ধমানের বাইরে গেলেও সঙ্গে করে এই স্টু নিতে তারা ভুলতেন না। সহজপাচ্য হওয়ার সাথে সহজেই গরম করে খাওয়া যায় বলেই এর বেশ কদর ছিল। শোনা যায় স্পিরিট ল্যাম্পের তাপে গরম করেও খেয়ে নিতেন অনেকেই।
পাশ্চাত্যের খাদ্যাভ্যাস সঙ্গে প্রাচ্যর মশলার মেলবন্ধনে তৈরি এই বর্ধমান স্টু তৈরি করাতেও বিশেষ সমস্যা ছিল না। সেদ্ধ টুকরো টুকরো করে কেটে নেওয়া মাংসর সাথে পরিমাণমতো আঙ্কোভি এসেন্স, মদিরা, নুন, জল, ময়দা, মাখন, টুকরো পেঁয়াজ ও গোলমরিচ সহযোগে হত এই রান্না। শেষে লেবুর রস সহযোগে পরিবেশিত হত। তবে এই রান্নার এক এবং একমাএ শর্ত হল রান্না হতে হবে রূপার পাত্রে। বলা হয় রূপার পাত্রে রান্না না হলে এই রান্নায় কৌলিন্য থাকে না। তবে সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই হারিয়ে যায় তার উদাহরণ হিসাবে এই প্রাচ্য পাশ্চাত্যর মেলবন্ধনে তৈরি বর্ধমান স্টু কেই ধরা যায়। এক সময়ের জনপ্রিয় বহু কাঙ্ক্ষিত সেই খাবার আজ প্রায় বিলীন।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – বঙ্গদর্শন
Discussion about this post