ঠাকুরবাড়ির রান্না নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। নানান পদের খাবারের সৃষ্টি ঠাকুরবাড়ির হেঁশেল থেকেই। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না এ বাড়ির এক অনবদ্য পদ হল ‘হেমকণা পায়েস।’ এ রেসিপির মালকিন হলেন প্রজ্ঞা দেবী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেয়ে ছিলেন প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী। শোনা যায়, তাঁর রান্নার হাত ছিল আশ্চর্যরকমের সুন্দর। ‘হেমকণা পায়েস’ যার নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আশ্চর্য এক অভিজাত্য।
হেম অর্থাৎ সোনা। কেশর দুধের সঙ্গে মিশে তৈরি হয় সোনালী রঙ। সেই থেকেই হয়তো এরূপ নামকরণ। তবে প্রজ্ঞা দেবীর এই রন্ধন কৌশলের প্রধান অনুপ্রেরণা ছিল তাঁর বাবা, হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ‘পুণ্য’ নামক একটি পত্রিকা প্রকাশে উৎসাহিত করেন প্রজ্ঞা দেবীকে। বিভিন্ন রান্নার পদ্ধতি তিনি নিয়মিত লিখতেন এই পত্রিকায়। শুধুমাত্র প্রজ্ঞা দেবীই নন, এই পত্রিকায় ঠাকুর বাড়ির অন্যান্য ভাই বোনেরাও লিখতেন। বলা যায়, এটা একপ্রকার পারিবারিক ম্যাগাজিনই ছিল। রান্নাবান্নার খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে লিখতেন প্রজ্ঞা দেবী। রান্নাঘরে ব্যবহৃত নানান পরিভাষা স্থান পেয়েছে এই পত্রিকায়। যেমন ‘রুটিতোষ’, ‘দাগ দেওয়া’, ‘বাখরা’ ইত্যাদি।
পাশ্চাত্যের আদলে বাংলায় নির্ঘন্ট অর্থাৎ বাংলায় মেনু কার্ড প্রথম প্রজ্ঞা দেবীই তৈরি করেন। তাঁর তৈরি মেনু কার্ডের নাম ছিল ‘ক্রমণী।’ তার সহজাত ভাষা মন কেড়েছিল সাধারণ মানুষের। ঠাকুরবাড়ির মেয়ে প্রজ্ঞা দেবী নিজেই সৃষ্টি করতেন নানান রেসিপি। তবে তাঁর এই কৌশল আরও বেশি সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে তাঁর বিয়ের পর। ১৮৯১ সালের ১১ মার্চ অহমিয়া সাহিত্যের জনক লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়ার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। স্বামীর সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর সুবাদে বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন রান্নার মেনু উঠে এসেছে তাঁর হাত ধরে। সেই রান্না গুলোই পরে স্থান পেয়েছে ‘পুণ্য’ পত্রিকায়।
১৩৩৭ সালে প্রজ্ঞা দেবীর প্রথম বই ‘আমিষ নিরামিষ বাহারে’ ছাপা হয়। এরপর এই বইটারই দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ হয় ‘আরও নিরামিষ’ নামে। আর তাঁর তৃতীয় বই এর নাম ছিল ‘আমিষ রন্ধন প্রণালী।’ প্রজ্ঞা দেবী তাঁর স্বামীর অনুরোধে রোজই নিত্য নতুন পদ রান্না করতেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পলতা পাতার বড়া, গাছ ছোলার ডালনা, আনারসী মালাই পোলাও ইত্যাদি। আর তাঁর রোজকার এই রান্না চর্চাই হাতের জাদু বাড়িয়ে তুলেছিল নানান পদের স্বাদের সঙ্গে।
তথ্য এবং চিত্র ঋণ – নীল মালাকার
Discussion about this post