মিষ্টি সকলের প্রিয়, ঠিকই। কিন্তু বাঙালির ফুড প্যালেটে যেন মিষ্টির আসন আরও খানিকটা বড়। আর তার মধ্যে রসগোল্লার জুড়ি মেলা ভার। রসগোল্লা শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ‘রস’- যার অর্থ মিষ্টি তরল এবং ‘গোল্লা’ যার অর্থ গোলাকার বল শব্দবন্ধ থেকে। মজার বিষয়, সাদা তুলতুলে এই মিষ্টির চাহিদা হাজার হাজার বছর ধরে বেড়েই গেছে, কমেনি একটুও। ঠিক যেভাবে বেড়েছে বাংলাদেশের, বরিশালের পিরোজপুরে ‘হুজুরের রসগোল্লা’র কদর।
পিরোজপুর শহরে মিষ্টান্নের খ্যাতির কথা উঠলেই চলে আসে দুলাল দাশের রসগোল্লা, হুজুরের রসগোল্লা ও বেকুটিয়ার দুলাল মুন্সির দইয়ের কথা। এখনও মানুষ পিরোজপুরের কাছাকাছি এলেই এইসব মিষ্টি খেতে ভোলেন না। ধরাবাঁধা নিয়মের মতই পিরোজপুর, বা তার আশেপাশের শহরে এলেই মানুষ এখানকার মিষ্টি বা দই খেয়ে এবং নিয়ে যান। কিন্তু কেন এখানকার মিষ্টির এই সুনাম? শোনা যায়, পিরোজপুরের রসগোল্লার খ্যাতি পাকিস্তান আমল থেকে। সেই সময়ের মিষ্টি তৈরির কারিগরদের জন্যই এখানকার মিষ্টির এই সুখ্যাতি ছিল। যেমন সুখ্যাতি রয়ে গেছে হুজুরের রসগোল্লার।
‘হুজুরে’র নাম মোজাম্মেল হোসেন হাওলাদার। তাঁর রসগোল্লা তৈরির অভিজ্ঞতা প্রায় ৫০ বছরের। দীর্ঘ এই সময়ে নিজস্ব শৈলী ও দক্ষতায় তিনি ধীরে ধীরে মানুষের ভালবাসা পেয়েছেন, আর আজ এক ডাকে তাঁকে সকলেই চেনে। চেনে তাঁর দোকান। পিরোজপুরের বাসিন্দারা অনেকে এখন বিদেশ যাওয়ার সময় বা শহরের বাইরে গেলে তাঁর দোকান থেকে স্বজন ও পরিচিতদের জন্য তাঁর দোকানের রসগোল্লা নিয়ে যান। মোজাম্মেলকে এলাকার সবাই ‘হুজুর’ নামে ডাকেন, তাই তাঁর দোকানের রসগোল্লার নাম হয়ে গেছে ‘হুজুরের রসগোল্লা’।
১৯৭৩ সালে রসগোল্লা তৈরি শুরু করেন মোজাম্মেল। ১৯৯৬ সালে শহরের সিও অফিস এলাকায় মিষ্টির দোকান তৈরি হয় তাঁর। মিষ্টির পাশাপাশি দোকানে রুটি, পরোটা ও সবজি মেলে। মোজাম্মেলের কথায়, একসময় তিনি নিজেই মিষ্টি তৈরি করতেন। এখন কারিগর রেখেছেন। তবে গুণগত মান ঠিক রাখার জন্য কাজের তদারকি করা তাঁর রোজদিনের কাজ। রসগোল্লার পাশাপাশি দই, রসমালাই ও চমচম বিক্রি হয় দোকানে। দোকানে প্রতিদিন গড়ে ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকার মিষ্টি বিক্রি হয়। আজ বর্তমানে তাঁর সঙ্গে কাজের দেখভাল করেন তাঁর ছেলেও।
Discussion about this post