প্রতিবেদনে রামিজ ইউসুফ
ইফতারের আয়োজনের ছবিগুলো দেখে ভাবতেই পারেন এটা ঢাকার অলিগলির ইফতার বাজারের চিত্র। কিন্তু একদমই তা নয়, এটি কলকাতা শহরের চিত্র। মহম্মদ আলি পার্ক। উল্টো ফুটপাতেই নাখোদা মসজিদের গলি। কলুটোলা। সেখান থেকে সোজা রাস্তা চলে গিয়েছে জাকারিয়া স্ট্রিট। রমজানের কলকাতার অন্যতম সেরা আকর্ষণ জাকারিয়া স্ট্রিট। দুর্গাপুজোর যেমন ধর্মতলা, গড়িয়াহাট। ক্রিসমাসের যেমন পার্ক স্ট্রিট ঈদের তেমন জাকারিয়া স্ট্রিট। এই রাস্তার উল্টো প্রান্ত চিৎপুর মিশেছে। তাই চিৎপুর দিয়েও জাকারিয়া স্ট্রিট আসা যায়। ফিয়ার্স লেন, কলুটোলা’র দিক থেকেও। নাখোদা মসজিদ এই রাস্তাতেই। লোয়ার চিৎপুর আর রবীন্দ্র সরণীর কাছে। কলকাতা তো বটেই, সারা পূর্ব ভারতের সব চেয়ে বড় মসজিদ।
রমজান মাস পড়লে রাতারাতি পুরো চেহারাটাই পালটে যায় অঞ্চলটার। পুরনো হাভেলি, ইমারত, লাল ইঁটের এবড়োখেবড়ো দেওয়াল। আতর, সুর্মা, কাচের চুড়ির রিনরিন। হাওয়ায় ভেসে আসা নমাজের সুর। মিলেমিশে অদ্ভুত এক সুফি আমেজ ভেসে বেড়ায় অলিগলি জুড়ে। মসজিদের মাথায় রোদের রেখারা পাতলা হতে শুরু করলে ঘন হয়ে ওঠে ইফতারি ব্যস্ততা। কাবাব, কোর্মা, বিরিয়ানি, হালিম এর গন্ধে ম ম করে চারপাশ। রাস্তার ধারে ধারে ফলের পসরা। শালপাতা বিছানো ট্রে, তার ওপর তরমুজ, খরমুজা, পেঁপে, কলা, আনারস। নানা রকম তেলেভাজা, সঙ্গে শশা- পেঁয়াজ-কাচালঙ্কা দেওয়া ছোলার চাট।
তার মধ্যেই ঈদের কেনাকাটি। জামা, জুতো, আতর, সুরমা কার্পেটের দরদাম। কিন্তু জাকারিয়া স্ট্রিটের সব চেয়ে বড় আকর্ষণ সেখানকার খাবার। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত রোজা অর্থাৎ উপবাসে থাকার পর মাগরবি নমাজ শেষে উপবাস ভঙ্গ করেন মুসলিমরা। রুহ আফজায় গলা ভিজিয়ে শুরু হয় ইফতার। লাল রঙের ঠাণ্ডা পানীয়। গলা দিয়ে নামলেই গোলাপের সুবাস। বাজারে রূহ আফজার টান থাকলেও এখানে কিন্তু তার কোনও ছাপ চোখে পড়ল না। জাকারিয়ার মুখেই পাশাপাশি দুই ফুড জয়েন্ট ‘দিল্লি-৬’ আর ‘তাস্কিন’। জাকারিয়া স্ট্রিটের সবচেয়ে জমজমাট ভিড়টা এখানেই। রাস্তার ওপর কাবাব কাউন্টার। রাস্তার ওপর টেবিল চেয়ার পেতে খাওয়া চলে। উল্টোদিকেই পুরনো দাওয়াখানা। সামনের ফুটপাতে পাউরুটি আর খাস্তা বিস্কুটের স্টল। বাখরখানি, রগিনি রুটি, শিরমাল, নানা রকম নাম। মাংসের নানা রকম পদ দিয়ে খাওয়া যাবে। মেওয়া ঠাসা পাউরুটি। সিমাই আর লাচ্চায় রঙের বাহার। নজর টানবেই।
ফিশ ফ্রাই নয়, মাছ ভাজা। মাহি আকবরি। আকবর খেতেন কিনা জানা নেই। তবে মাছ দেখলেই যাদের জিভে জল আসে তাদের বড় প্রিয়। বড় সাইজের রুই, কাতলা। গায়ে দই- হলুদ আর মশলা মাখানো। বিক্রি ওজনে। দরদাম মেটানোর পর কেটে পিস করে সরষের তেলে ভাজা। মাছের মাথাও ভাজা পাওয়া যায়। ধনেপাতা আর পুদিনার চাটনি দিয়ে সার্ভ। আছে বাগদা চিংড়িও। এভাবেই পেয়ে যাবে। ফিয়ার্স লেনে ১০০ বছরের পুরনো আদমস কাবাব শপে সুতলি কাবাব। ফিয়ার্স লেনের উল্টো দিকের গলি ধরে এগোলে দিলসাদ আহমেদের দোকান। খেতেই হবে খিরি কাবাব। সত্যি বলতে কি রমজানের সময় জাকারিয়া স্ট্রীট খাদ্যপ্রেমিদের স্বর্গ। এখানে না আসলে হয়তো কলকাতার অনেক স্ট্রীট ফুড চাঝা হবেনা। আর এখন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই ফুড স্ট্রিটের কাহিনি প্রায় সকলের জানা। তাহলে আর দেরি কেনো।একদিন ঢুঁ মেরে আসুন।
Discussion about this post