বাঙালির সকাল মানেই চায়ের সাথে দরকার সস্তায় সুন্দর বিস্কুট আর রুটি। আর তা যদি বেকারির বিস্কুট হয় তাহলে তো কোনও কথাই নেই। বেকারির রকমারি কেক বিস্কুট আজ সব বাঙালির জীবনের নিত্যদিনের সঙ্গী। শুধু তাই নয় স্বদেশি আন্দোলন কালেও যথেষ্ট অবদান রেখেছিল বাঙালির নিজস্ব বেকারি কালচার। আজ ঢাকা শহরের অলিতে-গলিতে অনেক বেকারির দোকান রয়েছে। তবে স্বাধীনতার আগে প্রতিষ্ঠিত ‘ইউসুফ কনফেকশনারি’ তাদের মধ্যে অন্যতম।
গোয়ালঘাট এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউসুফের হাত ধরে শুরু হয় ইউসুফ বেকারি। তার নানা আবদুল ব্যাপারীর ছোট আকারে কেক-বিস্কুটের ব্যবসা ছিল। সেই সূত্র ধরে ১৯৩৯ সালে বেকারি খুলে বসেন মোহাম্মদ ইউসুফ। শুরুতে নাম ছিল ‘ইউসুফ বেকারি’। পরে বেকারির বাইরে নতুন নতুন খাবার যোগ হওয়ায় নাম পাল্টে ‘ইউসুফ কনফেকশনারি’ করা হয়। ইউসুফ কনফেকশনারির প্রথম দোকানটি ছিল ৩৬ নম্বর জনসন রোডে। ১৯৫৮ সালে ১৯/এ জনসন রোডের শাখাটি শুরু হয়। এ ছাড়া ঢাকার ধানমন্ডি, গুলশান, বাংলামোটর ও রামপুরায় ইউসুফের আরও চারটি শাখা আছে। মোহাম্মদ ইউসুফের ছেলেরাই এখন দোকানগুলো চালান।মালিকদের একজন মোহাম্মদ ইস্রায়িল বললেন, “নতুন অনেক বেকারি হলেও ইউসুফের ব্যবসায় কোনো বেশ-কম হয়নি।”
জজ কোর্টের পেছনের কারখানা থেকেই ইউসুফের সব শাখায় খাবার সরবরাহ হয়। কারখানায় রুটি-বিস্কুট, কেক আর স্ন্যাক্সের জন্য ভিন্ন ভিন্ন খাবার প্রস্তুতের ৬০ জনের ওপর কারিগর কাজ করেন। ইউসুফ কনফেকশনারিতে ১৭-১৮ পদের বিস্কুট, দুই রকমের কেক, বিভিন্ন স্বাদের পেস্ট্রি, বনরুটি, পাউরুটি আর ছয় থেকে সাত ধরনের স্ন্যাক্স পাওয়া যায়। বিস্কুট কেজিপ্রতি ২০০-২৪০ টাকা। পাউন্ড কেক ১৩০-১৪০ টাকা। আর স্ন্যাক্সের দাম শুরু হয়েছে ছয় টাকা থেকে। এছাড়াও জন্মদিনের কেক এবং স্পেশাল অর্ডার ফোন করে নেওয়া হয়।
জনসন রোড শাখার কর্মচারী আবদুস সালাম বললেন, তাঁদের এখানে প্লেন কেকের বিক্রি সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া বাটার টোস্ট, ওভালটিন বিস্কুট এসবও আছে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায়। বহু বছর ধরে ইউসুফের ক্রেতা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, পেশায় আইনজীবী। বললেন, “৪০ বছরের বেশি হলো ইউসুফের কেক-বিস্কুট খাচ্ছি। কোথাও গেলে খুঁজি ইউসুফ কোথায় আছে।”
Discussion about this post