সময়ের সঙ্গে বদলেছে আমাদের জীবনযাত্রা। আর সেই সঙ্গে তাল মেলাতে পরিবর্তন ঘটেছে পছন্দের তালিকা গুলোতে। আজকাল কিছু কেনাকাটার ইচ্ছা হলেই আমরা ছুটি শহরের বুকে গজিয়ে ওঠা নিত্যনতুন শপিং মলগুলোতে। এই নতুনের ঝলকানিতে কোথাও যেন আমরা ভুলতে বসেছি পুরনো দোকানগুলোকে । তবে এই পরিবর্তনের চোখে চোখ রেখে নিজের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে কলকাতার বেশ কিছু পুরনো দোকান। আজ বলবো সেই রকমই এক প্রাচীন বস্ত্র প্রতিষ্ঠানের কথা যার নাম ‘ইয়ং বেঙ্গল সোসাইটী’।
উত্তর কলকাতার প্রাণকেন্দ্র শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে অবস্থিত এই ইয়ং বেঙ্গল সোসাইটী। দীর্ঘ ১৩৫ বছর ধরে স্বমহিমায় ধরে রেখেছে নিজের পরিচয়। যার পথ চলা শুরু হয়েছিল শ্রীরামচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়ের হাত ধরে। ‘ইয়ং বেঙ্গল’ নামটা শুনলেই মনে পড়ে যায় ডিরোজিও ও তাঁর অনুগামীদের কথা। তাঁদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই এই বস্ত্র প্রতিষ্ঠানটির নাম রাখা হয়েছিল ‘ইয়ং বেঙ্গল সোসাইটী’ এমনটাই জানালেন প্রতিষ্ঠানের তরফে সম্মান বাবু।
কেবলমাত্র নামের সাথেই যে ইতিহাস জড়িয়ে আছে তেমনটা কিন্তু নয়। দীর্ঘ এতগুলো বছর চলার পথে ইয়ং বেঙ্গল সোসাইটি সাক্ষী হয়ে রয়েছে বহু ইতিহাসের। তিনি আরও জানালেন স্বদেশী আদর্শে যখন সাড়া দিয়েছিল গোটা সমাজ, তখন পিছিয়ে থাকেননি তারাও। বস্ত্র প্রতিষ্ঠান হয়েও স্বদেশী আন্দোলনের সমর্থনে ইয়ং বেঙ্গল সোসাইটী জ্বালিয়েছিল একাধিক বিদেশী বস্ত্র। কেবল সাধারণ মানুষই নয়, এই দোকানের ক্রেতা ছিলেন অনেক বিখ্যাত মানুষেরাও। উত্তম কুমার, তরুণ কুমারের মতো নায়ক থেকে শুরু করে কৃষ্ণ চন্দ্র দে’র মতো প্রখ্যাত ব্যাক্তিরাও কেনাকাটা করতেন এই বনেদি দোকান থেকে।
প্রথমদিকে মূলতঃ ধুতি, গামছা এবং খাদিবস্ত্র বিক্রি দিয়েই ব্যবসার শুরু করেছিলেন তাঁরা। তবে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এখন তারা রাখেন নানা ধরনের আধুনিক পোশাক। তবে আধুনিকতা বদলাতে পারেনি প্রাচীন ঐতিহ্য। কেবল আধুনিকতার ছোঁয়ায় পুরাতন যেন পেয়েছে এক নতুন দিশা। এখনও এই দোকানে গেলেই চোখে পড়ে নানা ধরনের ধুতি, গামছা, খাদিবস্ত্রের সম্ভার। শুধু সে যুগেই নয়, ইয়ং বেঙ্গল সোসাইটীর জিনিসের চাহিদা রয়েছে আজও প্রায় একইরকম। রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের বস্ত্র যায় এই দোকান থেকেই। আবার কলকাতার অনেক নামী পুজো উদ্যোগও মাতৃ প্রতিমার পরিধানের জন্য বেছে নেন এই দোকানের বেনারসীকেই।
ঐতিহ্য আর জনপ্রিয়তার জোরেই বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজারেও নিজের স্থানকে ধরে রেখেছে এই প্রতিষ্ঠান। তাই আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধনকে বুঝতে হলে একবার ঢুঁ মারতেই হবে ইয়ং বেঙ্গল সোসাইটীতে।
Discussion about this post