ভূস্বর্গ’! নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে আসে তুষারাবৃত পর্বতশ্রেণী আর উপত্যকায় অসংখ্য টিউলিপ ফুলের সমারোহ। একটা লেক যেখানে শয়ে শয়ে ফুলে ভর্তি সুসজ্জিত শিকারা। পাহাড়ের গা বেয়ে কিছু মানুষ উঠে চলেছে তাদের চমরি গাই নিয়ে। হ্যাঁ, ভূস্বর্গ বলতেই কাশ্মীরের (Kashmir) এই চির পরিচিত দৃশ্যগুলোই ভেসে আসে চোখে। এরকম মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে বহু মানুষ ছুটে যায় ভূস্বর্গে। চমরি গাই (Yak) একটি বিরল জন্তু এবং উপত্যকার একটি অন্যতম আকর্ষণ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দুর্গম পাহাড়ী রাস্তা দিয়ে চমরি গাইদের আর এখন সেভাবে দেখা যায় না।
কাশ্মীরের পাহাড়ী এলাকার একটি বিশেষ প্রাচীন ব্যবসা এবং সেখানের অর্থনীতির অন্যতম ভিত হল চমরি গাইয়ের ব্যবসা।কাশ্মীরের কার্পেট, চামর, উল জাতীয় পোশাকের বড় অংশ আসে এই ইয়াকের গায়ের লোম ও চামড়া থেকে। ইয়াক হার্ডারার’রা বংশানুক্রমিকভাবেই এই ব্যবসা চালিয়ে যান। যাযাবরের মতো তারা ঘোরেন। তবে নতুন প্রজন্ম প্রাচীন ব্যবসায় আসতে চায় না। এখনো অবধি যারা এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা প্রায় সবাই প্রবীণ। এখন যার সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে মোটামুটি ১০০ জনের কাছে। কাশ্মীর ও লাদাখে প্রধানতঃ এই ইয়াক হার্ডারারদের বাস। তবে তারা বছরের বেশির ভাগ সময় চমরি নিয়ে পাহাড়ের একস্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেরায়। শীত শেষে অথবা গরম পড়ার সাথে সাথেই ইয়াক হার্ডারার’রা চমরি গাইয়ের গায়ের লোম ও লেজের চুল তুলে নেয়। তারপর সেখান থেকে তৈরি হয় শীতের পোশাক, কার্পেট ইত্যাদি। তবে ‘ইয়াক হার্ডার’দের পরবর্তী প্রজন্ম অন্য জীবিকায় নিজেদের মেলে ধরতে চাইছেন।
শুধু জীবিকার তাগিদেই নয়, ইয়াক হার্ডারেরা অনেক কঠিন পরিস্থিতিতে পাশে পায় তাদের এই পোষ্যদের। দুর্গম পাহাড়ী রাস্তায় উঠে যেতে সাহায্য করে। ইয়াক হার্ডারারদের জীবন অত্যন্তই কঠিন। শীতে কত সময়ে কোনো খাওয়ার অথবা জল কিছুই জোটে না। বরফ গলিয়ে তৃষ্ণা মেটাতে হয়। কিছু কিছু জায়গায় যেখানে তাপমাত্রা শূন্য এবং অক্সিজেনের মাত্রাও অত্যন্ত কম সেখানে টিকে থাকার অসাধারণ ক্ষমতা এই প্রাণীর। এই বিরল প্রাণীটি পাহাড়ের জীবনধারায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা এর আগেও বহু বিরল প্রাণীদের বিলুপ্ত হতে দেখেছি। কাজেই এভাবে চললে ডোডো পাখির মতোই আমরা হারিয়ে ফেলব প্রাণী জগতের আরেকটি প্রজাতিকেও।
Discussion about this post