২০২০ সালে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন কমলা হ্যারিস যিনি হলেন প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত অ্যাফ্রো-আমেরিকান। হ্যারিসকে আগস্টে জো বিডেন তার রানিং মেট হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। কমলা তার নিজের রাষ্ট্রপতি হওয়ার স্বপ্ন স্থগিত করার কয়েক মাস পরে বলেছিলেন যে, তাঁর প্রচার চালিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সংস্থান নেই। ২০০৮ সালে আলাস্কার গভর্নর সারা পালিন এবং ১৯৮৪ সালে নিউইয়র্কের প্রতিনিধি জেরাল্ডিন ফেরারোর পর শুধুমাত্র তিনিই আমেরিকার অন্যতম প্রধান একটি পার্টির টিকিটে নির্বাচিত তৃতীয় মহিলা সহ-রাষ্ট্রপতি প্রার্থী ছিলেন। সেনেটের মাত্র তিনজন এশীয় আমেরিকানদের মধ্যে অন্যতম হলেন ৫৬ বছর বয়সী ক্যালিফোর্নিয়ার সেনেটর কমলা হ্যারিস।
ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে হ্যারিস আরও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি একটি কাউন্টি জেলা অ্যাটর্নি হয়েছেন, সান ফ্রান্সিসকোর প্রথম মহিলা জেলা অ্যাটর্নি নির্বাচিত হয়েছেন এবং ভারতীয়-বংশোদ্ভূত প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান যিনি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। এক দশক আগে সাংবাদিক গুয়েন ইফিল হ্যারিসকে ‘মহিলা বারাক ওবামা’ বলেছিলেন ‘লেট শো উইথ ডেভিড লেটারম্যান’ – এ। পরে উইলফবি টনি পিন্টোর এক ছোট ব্যবসায়ী তাকে ‘রাষ্ট্রপতির একটি তরুণ, মহিলা সংস্করণ’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তাঁকে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়, যিনি ২০১৬ সালে মার্কিন সেনেটসহ বিভিন্ন নির্বাচনে তাঁর সমর্থন করেছিলেন।
কমলা হ্যারিসের বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস ছিলেন জামাইকার বাসিন্দা এবং তাঁর মা শ্যামলা গোপালান ছিলেন চেন্নাইয়ের ক্যান্সার গবেষক ও নাগরিক অধিকারকর্মী । তিনি অবশ্য নিজেকে ‘আমেরিকান’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তাঁর বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদের পর হ্যারিসের বেড়ে ওঠা মূলত তাঁর মায়ের প্রভাবে। তিনি বলেছেন যে তাঁর মায়ের প্রভাবেই কমলা এবং তাঁর ছোট বোন মায়া কৃষ্ণাঙ্গ সংস্কৃতিতে নিমগ্ন হয়েছিলেন। হ্যারিস তাঁর ভারতীয় সংস্কৃতি গ্রহণ করে বড় হয়েছেন, তবে গর্বের সাথে অ্যাফ্রো-আমেরিকান জীবনযাপনও করছেন। হ্যারিস ওকল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং বার্কলেতে বেড়ে ওঠেন। তিনি তাঁর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা কানাডায় সম্পন্ন করেন এবং সেই সময়কালে তাঁর মা মন্ট্রিলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন। জানা গিয়েছে, হ্যারিসের মা তাঁকে শিখিয়েছিলেন কোনও কিছু নিয়ে অভিযোগ করার পরিবর্তে তার সমাধানের চেষ্টা করার জন্য। তিনি পড়াশোনার জন্য আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর কাটিয়েছিলেন, যা তিনি তাঁর জীবনের সবচেয়ে গঠনমূলক অভিজ্ঞতা হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
অ্যাটর্নি ডগলাস এমহফের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন হ্যারিস, যিনি প্রচারকার্যে এগিয়ে এসেছিলেন। আগের বিবাহের তাঁর দুটি সন্তান তাদের সৎ মাকে ‘মোমালা’ নামে ডাকে। হার্ভার্ডের পরে তিনি হেস্টিংসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে স্নাতকোত্তর অর্জন করেন এবং আলমেডা কাউন্টি জেলা অ্যাটর্নি অফিসে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। তিনি ২০০৩ সালে সান ফ্রান্সিসকোর শীর্ষ আইনজীবী হয়েছিলেন। ২০১০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার আগে আমেরিকার সর্বাধিক জনবহুল রাজ্যের শীর্ষ আইনজীবী ছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল পদে প্রায় দুই মেয়াদে হ্যারিস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অন্যতম উঠতি তারকা হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার জুনিয়র মার্কিন সেনেটর হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি প্রচারের সময়, সিএনএনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নীল মাখিজা লিখেছেন, “Harris knows the Black American experience. She knows the South Asian-American experience. She knows the immigrant experience. She knows the aspirational power of the American dream. She is the running mate for this moment.”
Discussion about this post