চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই সকাল শুরু হয় বহু মানুষের। এই চায়ের সাথেই জড়িয়ে একরাশ আবেগ ও তৃপ্তি। আর চায়ের আসরে আড্ডা না হলে কি আর জমে! এমনই এক বিকেলের চায়ের আড্ডার আসর জানান দিয়েছিল চা বিক্রেতার অজানা খবর। চায়ের দোকানদারের নাম দুর্গাদাস কর। এলাকার মানুষের কাছে তিনি ভন্দু নামেই পরিচিত। আর রঘুনাথপুরে অবস্থিত সেই রাস্তাটির নামকরণ হয় তার ডাকনাম দিয়েই। আজ্ঞে হ্যাঁ। চায়ের দোকানদারের নামেই রাস্তাটির নাম হয় ‘ভন্দুর মোড়’। জীবিত অবস্থায় নামকরণ হয়েছে রাস্তাটির। চায়ের কাপে একটু চিনি মেশালে তার স্বাদ আরও দ্বিগুণ হয়। তেমনই খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ একরত্তি প্রশংসা পেলে আরও কটা দিন বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পায় আর কি। আর এই ভালো লাগা থেকেই তিনি তার দোকানে ভিড় করা চা-খোরদের কাছে রাস্তার মোড়ের গপ্পো করতেন।
দুর্গাবাবু বলেন, ৬৩ বছর ধরে এই দোকানে চা বিক্রি করছেন তিনি। ছোট থেকেই অভাব-অনটনের সংসার ছিল তাদের। অষ্টম শ্রেণীতেই পার করে এসেছেন স্কুলের গণ্ডি। তারপর থেকেই বাবার সাথে কাধেঁ কাধ মিলিয়ে ব্যবসার কাজে হাত লাগান তিনি। তখন সালটা ছিল ১৯৬০। সেই সময় ওই এলাকায় এই একটাই দোকান টিমটিম করে জ্বলছিল। শুধু চা নয়, চায়ের সাথে টাও মিলত তাদের দোকানে। চারিদিকে ছিল জঙ্গল। সেই এলাকায় একটা চালকল ছিল। খদ্দেরকে বলা হয় লক্ষ্মী। আর সেইসময় তাদের দোকানের লক্ষ্মী ছিলেন সেই চালকলের পরিশ্রমী শ্রমিকবৃন্দ। এরপর আস্তে আস্তে চা ও চপের জনপ্রিয়তা লোকমুখে ছড়িয়ে পরে। জনপ্রিয়তা আর এলাকায় একমাত্র দোকান হওয়ার কারণে সরকারি শিলমোহরও পরে। এই গপ্পোগুলো করার সময় তার চোখে মুখে গর্বের ছাপ স্পষ্ট হয়। আসলে সাধারণ মানুষের ভিড়ে অসাধারণ হওয়ার আনন্দ পান তিনি।
এখন তার বয়স ৭৯। কোনও মতে দোকানটি চালান। তবে মানুষের আনাগোনা বেশ ভালো। তিনি বলেন, চা বিক্রি করেন বলে তার কোনো আক্ষেপ নেই। তিনি যে সম্মানটুকু পেয়েছেন তাই যেন তাকে বাঁচিয়ে রাখে। চায়ের দোকান থেকে যতটুকু আয় হতো তা দিয়েই পাঁচ ছেলে মেয়েকে মানুষ করেছেন তিনি। তিন কন্যার বিয়েও দিয়েছেন দোকানের আয় করা টাকায়। আজও রঘুনাথপুর এলাকায় কান পাতলে ভেসে আসে বাস কন্ডাক্টর চিৎকার করে বলছে, “ভন্দুর মোড়, ভন্দুর মোড়।” আশা রাখি, আগামী দিনে দুর্গাবাবুর ডাকনামে খোদাই করা রাস্তার মোড়ের নেমপ্লেটটিই তাকে অমর করে রাখবে রঘুনাথপুর এলাকার মানুষের মনে।
Discussion about this post