সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত আজ গোটা বিশ্ব। এই সোশ্যাল মিডিয়াকে ভর করে যে কত দুর্নীতি চলছে আশেপাশে, তার খবর তো আসেই কানে। কিন্তু এই অলীক দুনিয়াই যে কত মানুষের জীবনে এনে দিয়েছে এক রাশ খুশির আলো। তার কটা খবরই বা আমরা রাখি। চলুন দেখা যাক, এই সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে এক সামান্য ঠেলাগাড়িকে নিয়ে গেল কোটি টাকার বাড়িতে।
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট বলেছিলেন, ‘নারীরা অনেকটা টি-ব্যাগের মতো। আপনি জানতেও পারবেন তিনি কতটা শক্তিশালী যতক্ষণ না তাঁকে গরম জলে ফেলা হচ্ছে।’ আর এই উক্তির বাস্তবের মাটিতে উদাহরণ হলেন, ঊর্বশী যাদব। কথায় বলে,”সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে।” না, কোনো বিশেষ গুণ হয়ত নয়, নারীর মনোবলের জোরই হল তার সেই গুণ।
নিতান্তই এক সাধারণ পাঞ্জাবি বাড়ির মেয়ে ছিলেন ঊর্বশী যাদব। স্নাতক হয়ে, তখন তিনি সাধারণ একটি অফিসের চাকুরিজীবি। ২০১০ সালে পা বাড়ালেন জীবনের এক নতুন অধ্যায়ে। রিয়াল এস্টেট সংস্থায় কর্মরত অমিত যাদবের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। কিন্তু দুঃসময়ের ঝড়ের যে কোনো আগাম বার্তা থাকে না। ক্রিকেট খেলতে গিয়ে গুরুতর আহত হন অমিতবাবু। বিয়ের এক বছরের মাথাতেই, অফিস ছেড়ে ঘরবন্দী হন স্বামী। সংসার এখন ঊর্বশীর মুখ চেয়ে। তাই একটি শিশুদের স্কুলে শিক্ষকতার কাজ নিলেন ঊর্বশী। কিন্তু তাতে সংসারের টানাটানি মিটলেও, স্বচ্ছলতা ফিরল না। তার ওপর ২০১৬-তে স্বামী ছাদ থেকে পড়ে আরও বড় দুর্ঘটনার সামনাসামনি হলেন। সবটা যেন চেয়েও গুছিয়ে উঠতে পারছিলেন না ঊর্বশী।
রাস্তার ধারে ঠেলাগাড়িতে খাবার বিক্রি, এতো আমরা রোজই দেখে থাকি। কিন্তু তার মধ্যেই নিজের পেশা খুঁজে পেলেন ঊর্বশী। ঠেলাগাড়িতে সাজিয়ে ফেললেন দোকান। দোকানের নাম হল ‘ঊর্বশী’জ ছোলা-কুলচা’। আত্মীয় থেকে প্রতিবেশী, উৎসাহ পাননি কোথাও থেকে একফোঁটা। বিলাসব্যাসন সুখী পরিবারের এক মেয়ের পক্ষে হঠাত্ করে বিয়ের পর রাস্তায় দাঁড়িয়ে খাবার বিক্রি। ব্যাপারটা বলতে সহজ লাগলেও, করাটা খুবই ঝুঁকির। নিজেও অনেকবার ভেবেছেন, হয়ত শেষ অবধি টানতে অক্ষমই হবেন। কিন্তু ওই একবিন্দু আত্মবিশ্বাসই বদলে দিল তাঁর জীবনের রূপ।
হঠাৎ দেবদূতের মতো এলেন সাংবাদিক ব্লগার সোনালী। ফেসবুক পেজে তুলে ধরলেন ঊর্বশী’জ ছোলা-কুলচার গোটা কাহিনী। রাতারাতি জনপ্রিয়তায় শিখরে পৌঁছল দোকানটি। হু হু করে বাড়তে থাকে অর্ডার। দিনে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকার উপার্জনের আনন্দ ঘিরে ধরল তাঁদের জীবন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টে অবধি চলত কাস্টোমারের ঠেলাঠেলি। আজ গুরগাঁওতে তিন কোটি টাকার বাড়ির মালকিন হলেন, সেদিনের সেই একচালা ঘরে থাকা ঊর্বশী।
Discussion about this post