ছবি প্রতীকী
আর হাতে মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরেই পুজোর আমেজে মাতবে গোটা বাঙালি জাতি। শরতের সাদা মেঘের ভেলায় মুগ্ধ আপামর বাঙালি। কদিন পরেই বাতাসে উড়বে ধুনোর সুবাস। ঢাকের বাদ্যি জানান দেবে, মা এসেছেন। দুর্গাপুজো মানেই থিমের ভিড়ের পাশাপাশি বনেদি বাড়ির পুজোর জাকজমক, আলোর রোশনাইতে সেজে ওঠা ঠাকুর দালান। এর মধ্যেও কিছু প্রাচীন পুজো ও তার অভিনব বেশ কিছু রীতি থাকে যেগুলো সত্যিই আকর্ষণীয়। পরিচিতির আড়ালে এভাবেই বেঁচে থাকে বহু বছরের পুরনো সেসব পুজো। হাওড়ার শিবপুরের সাধুখাঁ পরিবারের পুজো হল প্রায় ২০০ বছরের তেমনই এক সাবেকি দুর্গাপুজো। এতগুলো বছর ধরে একইভাবে সবরকম রীতি-নীতি, নিয়ম-কানুন, ঐতিহ্য মেনে আজও মাতৃ আরাধনার আয়োজন চলছে এই পরিবারে।
রথ অথবা উল্টো রথের দিন নিয়ম মেনে সাধুখাঁ বাড়িতেই করা হয় কাঠামো পুজো। এরপর খড়, কাঠ দিয়ে তোড়জোড় শুরু হয় দুর্গা প্রতিমা তৈরির। সাধুখাঁ বাড়ির ঠাকুরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো একচালার সাবেকি ঘরানায় মা মহিষাসুরমর্দিনী তাঁর সন্তানদের নিয়ে রাঙিয়ে তোলেন মন্দিরটি। উজ্জ্বল হলুদবর্ণা দেবী প্রতিমার পায়ের কাছে তাঁর বাহন ধবধবে সাদা সিংহ। সঙ্গে তাঁর সন্তান-সন্ততি। এই পরিবারের রীতি অনুযায়ী মহালয়ার ঠিক পরের দিন দেবী দুর্গার ঘট স্থাপন করা হয় মন্দিরে। সেখানেই চলে পুজো। এর সঙ্গে ওইদিন থেকে পঞ্চমী পর্যন্ত সাবেকি রীতি মেনে একটি বেলগাছ এবং মনসা গাছকে দেবী হিসাবে চণ্ডীপাঠ যোগে পুজো করা হয়ে থাকে।
ষষ্ঠীতে শুরু মায়ের বোধন। এই বাড়ির পুজোর রীতি মেনে সপ্তমীর দিন বাড়ির ছেলেরা কাঁধে করে নবপত্রিকাকে নিয়ে যান গঙ্গাস্নানে। এই বাড়ির পুজোর বিশেষ আকর্ষণ হল সন্ধি পুজো। সন্ধি পুজোয় পাঁঠা বলি ছাড়াও ১০৮টি প্রদীপ জ্বালানো এবং ১০৮টি পদ্মফুলে মায়ের পুজো চলে। আগে সপ্তমী থেকে নবমী অবধি রোজ পাঁঠা বলি হলেও এখন সন্ধিপুজোর দিনেই শুধুমাত্র পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। সাধুখাঁ বাড়ির পুজোর আরেকটি উল্লেখযোগ্য রেওয়াজ হল দর্পণ স্নান। বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য মেনে চল্লিশ ধারার জল দিয়ে দেবীর দর্পণ স্নান করানো হল এই বাড়ির আরেক রেওয়াজ। মানস সরোবর, শতুদ্রু, গঙ্গোত্রী, পুষ্কর, চিল্কা, তিস্তা, তোর্সা ও আরও চল্লিশ রকমের নদী, সমুদ্র, হ্রদ, ঝর্ণা থেকে জল সংগ্রহ করে সেই জলে দেবীর দর্পণ স্নান হয়। কোনও বছরেই অন্যথা হয় না এই নিয়মের।
এভাবেই পরিবারের নানা নিয়ম মেনে চলে আসছে সাধুখাঁ পরিবারের পুজো। শোনা যায়, স্বপ্নাদেশেই এই পরিবারের কর্ত্রী অর্থাৎ সাধুখাঁ বাড়ির এক সদস্যা রাসমণি দেবীর শাশুড়ি মা এই পুজো শুরু করেছিলেন। নানান অভাব-অনটনের মধ্যেও কখনো তিনি বন্ধ হতে দেননি এই পুজো। একবার নিজের গয়না বন্ধক রেখেও কুমোরটুলি থেকে মাকে এনেছিলেন মন্দিরে। আর সেই পুজোকেই ভক্তিভরে সব নিয়ম নীতি পালনের মধ্যে দিয়ে আজও বয়ে নিয়ে চলেছেন আজকের সদস্যরা।
Discussion about this post