প্রতীক্ষা শেষের পর মাহেন্দ্রক্ষণ প্রায় হাজির। সেজে উঠেছে প্রতিটি শহর থেকে শুরু করে প্রতিটি গ্রাম। জেলায় জেলায় চলছে তোড়জোড়ের শেষ পর্ব। একই ছবি পূর্ব বর্ধমান জেলার তেলুয়া গ্রামের দত্ত বাড়ির বনেদি পুজোকে ঘিরেও। প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ বছরেরও প্রাচীন এই পুজোকে ঘিরে রয়েছে নানান কাহিনী। দত্ত বংশের সন্তান রামভদ্র দত্তের হাত ধরেই প্রথম মায়ের পুজো শুরু হয় দত্ত বাড়িতে। একসময় বাধ সেধেছিল আর্থিক-অনটন। ফলে দশ বছর মা দত্ত বাড়ির পুজো না পেলেও এই পরিবারেরই এক জামাই পরিবার, ঘোষ পরিবার এই পুজোটিকে এগিয়ে নিয়ে যান।
তবে মায়ের আশীর্বাদ এবং রামভদ্র দত্তের এক উত্তর পুরুষ সন্তোষ দত্তের অসামান্য ব্যবসায়িক বুদ্ধির জোরে পরিবারে ফের সুদিন ফিরে আসে। আবার মহা সমারোহে পূজিতা হন একচালা প্রতিমা। সেই থেকে আজ প্রায় একশো বছর ধরে চলে আসছে এই পুজো। তবে ঘোষ পরিবারের সেই সাহায্য আজও ভোলেননি তারা, তাই পুজোয় সংকল্প হওয়ার সময় দত্ত এবং ঘোষ দুই পরিবারেরই একসঙ্গে হয়। এখানে পুজো হয় বৈষ্ণব ধর্মমতে। আগে শাক্ত মতে নবমীতে ছাগ বলি হলেও এখন একটি চালকুমড়ো ও ছটি নারকেল বলি দেওয়াই দত্ত বাড়ির রীতি।
দেবীর বোধন এখানে ষষ্ঠীতে নয়, হয় আশ্বিনের শুক্ল প্রতিপদ তিথিতে। চারটি ঘট প্রতিস্থাপন করে প্রথমে নারায়ণের পুজোর মাধ্যমে শুরু হয় দেবীর আরাধনা। দত্ত বাড়ির আরেকটি অভিনব প্রথা হল প্রত্যেক শরিক এখানে লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর প্রতীক হিসেবে স্থাপন করেন যথাক্রমে ধানের কৌটো এবং দোয়াত কলম। আবার পুজোর শেষে দশমীর পর এই প্রতীকগুলো পৌঁছে দেওয়া হয় তাদের বাড়িতে। সত্যিই দত্ত বাড়ির এ এক অনন্য প্রথা! বাড়ির প্রথা অনুযায়ী দেবীর বোধনের দিন থেকে শুরু করে দশমী অবধি প্রত্যেক শরিকের বাড়িতে মাছ ছাড়া আর অন্য কোনো আমিষ পদ একেবারেই ঢোকে না।
দশমীর ছবি অবশ্য একেবারেই অন্যরকম। সাধারণত পুজোয় অষ্টমীর অঞ্জলীর মত দশমীতে এখানে অঞ্জলীর নিয়ম। মন খারাপের আঁচ থাকলেও দত্ত বাড়ির বর্তমান সদস্য চিন্তন দত্তের কথায়, দশমীর দিনের জন্য তারা তাদের প্রিয় জামাকাপড় তুলে রাখেন। দশমীর দিনটা তাদের কাছে বিশেষ এক আনন্দের দিন। শুধুমাত্র বাড়ির প্রবীণতম সদস্যার হাতেই বরণের পর ঘরের মেয়েকে এখানে কনকাঞ্জলি দিয়ে বিদায় দেওয়া হয়। আবার শুরু হয় আসছে বছরের দীর্ঘ এক প্রতীক্ষা!
Discussion about this post