এদেশে আজ অবধি যারা প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেছেন তাদের সকলকেই আজও মনে রেখেছে দেশবাসী। জওহরলাল নেহেরু থেকে শুরু করে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, ইন্দিরা গান্ধী, মোদি পর্যন্ত সকলকেই জনগণ একডাকে চেনে। কিন্তু আজকে বলতে চলেছি এমন একজনের কথা যিনি দু’বার প্রধানমন্ত্রী পদে বসার সত্ত্বেও ইতিহাসের পাতায় তার নাম উল্লেখ পর্যন্ত করা হয়নি। যিনি জনগণের কাছেও আজ একরকম বিস্মৃতই।
গুলজারিলাল নন্দ, ভারতের একজন বিখ্যাত রাজনীতিবিদ, যিনি দু’বার দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবুও, ইতিহাসে তার অবদান অনেকের কাছে অস্পষ্ট। কিন্তু তার কারণ কী? ১৮৯৮ সালের ৪ জুলাই অবিভক্ত ভারতের শিয়ালকোটে (বর্তমানে পাকিস্তানে) জন্মগ্রহণ করেন গুলজারিলাল। জানা যায়, মহাত্মা গান্ধী তাকে আহ্বান জানিয়েছিলেন স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়ার সময়ই সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাই গান্ধীজির আহ্বানকে অস্বীকার করতে পারেননি। স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেওয়ার পর তিনি দু’বার জেলও খেটেছিলেন।
১৯৬৪ সালে নেহেরুর মৃত্যুর পরে দেশের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হলেন গুলজারিলাল। কিন্তু তিনি মাত্র ১৩ দিনের জন্য এই পদে ছিলেন। এরপর ১৯৬৬ সালে তাসখন্দে প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি দ্বিতীয়বার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কিন্তু সেবারও ১৩ দিন ছিল তাঁর মেয়াদ। এরপর দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। নেহরু ও শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি তিনি গৃহ, অর্থ, শিক্ষা ও শ্রমসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও সামলেছিলেন। গুলজারিলালের কন্যা পুষ্পাবেন বাবার দু’বার প্রধানমন্ত্রী হওয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, “উভয় ক্ষেত্রেই উনি বিষয়টাকে দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছিলেন। দ্বিতীয়বারে তো মন্ত্রীসভার বেশ কয়েকজন চাইছিলেন উনিই প্রধানমন্ত্রী থাকুন। কিন্তু বাবা নিজেই চাননি। ক্ষমতার খেলার অংশ হতে ওঁর আপত্তি ছিল”।
তিনি একসময় কংগ্রেসের ভিতরের লড়াইয়ের শিকার হন, বিশেষ করে ইন্দিরা গান্ধীর উত্থানের সময়। তাই ১৯৭৫ সালে গুলজারিলাল পাকাপাকি ভাবে অবসর নেন রাজনীতি থেকে। তিনি সর্বদাই নিজেকে দুর্নীতির একেবারে বিপরীত মেরুতে রেখেছিলেন। ১৯৯৮ সালে তিনি শতবর্ষে পা রাখার কয়েক মাস আগে মারা যান। ঠিক তার আগের বছর ১৯৯৭ সালে তিনি ভারতরত্ন পেয়েছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনকে সর্বদাই সহজ সরল রাখতে পছন্দ করতেন তিনি। মৃত্যুর সময় তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলতে কিছুই ছিল না। কিন্তু তবুও বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই তাঁর সম্পর্কে জানেন না। কারণ ইতিহাসে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং সেই যুগের অন্যান্য রাজনীতিবিদদের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে গুলজারিলালের মতো ব্যক্তিত্বরা ঐতিহাসিক বর্ণনায় উপেক্ষিতই থেকে যান।
Discussion about this post