স্থূলকায়, হাস্যমুখর এবং সাদা-দাড়িবিশিষ্ট এক ব্যক্তি। তার পরনে থাকে সাদা কলার ও লাল কোট। লাল ট্রাউজার্স। মাথায় লাল চোঙা টুপি। কালো চামড়ার বেল্ট ও বুটজুতো। কাঁধে বড় এক লাল রঙের ঝুলি। বুঝতেই পারছেন কার কথা বলছি? হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন। সান্তাক্লজ কিংবা সান্তাবুড়ো। ছোটরা যার জন্য সারাবছর অপেক্ষায় থাকে। কবে বড়দিন আসবে আর সান্তা তাদের ইচ্ছাপূরণ করবে। কিন্তু বড় হয়ে মাথায় কিছু প্রশ্ন ঘুরে বেড়াত। কে এই সান্তা? কীইবা তার পরিচয়? আর কেনইবা সে ছোটদের উপহার দেয়? চলুন তবে, আজ সান্তাক্লজের আসল পরিচয়টা একটু ঘেঁটে নেওয়া যাক।
পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ইতিহাসে কিংবদন্তী এক চরিত্র সান্তাক্লজ। যাঁর বাস্তবের নাম সেন্ট নিকোলাস। তিনি একজন ধর্মযাজক। এশিয়ার মাইনর তথা বর্তমান তুরস্কের পাতারা নামক অঞ্চলে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খুবই মহৎ ও দানশীল ব্যক্তি। অসহায় গরিবদের সাহায্যে সর্বদাই এগিয়ে আসতেন। তাঁকে ঘিরে একটি কাহিনীও প্রচলিত লোকমুখে। অভাবের তাড়নায় এক গরীব মানুষ তার মেয়ের বিয়ে দিতে ছিল অক্ষম। অগোছালোভাবেই, ক্রিসমাসের দিন বাড়ির ফায়ার প্লেসের পাশে ভেজা মোজা শুকোতে দিয়েছিল সে। সকালে উঠে দেখল এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। ওই মোজার মধ্যে বেশ কিছু সোনার কয়েন। তার পর থেকেই সাধারণের মধ্যে এক ধারণা জন্মায়। ক্রিসমাসের দিন বাড়ির ফায়ার প্লেসের পাশে মোজা ঝুলিয়ে রাখলেই সান্তাক্লজ এসে তাতে উপহার রেখে যাবেন। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী নিকোলাস ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ও মধ্যরাতে ছেলেমেয়েদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে উপহার দেন।
সান্তা মূলত আটটি বল্গা হরিণ টানা স্লেজ গাড়িতে উড়ে সবার বাড়ি যেতেন। যদিও এই ধারণাটি প্রথম এসেছে এক সংবাদমাধ্যমের কল্পচিত্র থেকেই। ক্রিসমাসে কেউ উপহার পেলেই, ভেবে বসত এ সান্তারই কাজ। তবে সান্টাক্লজ সারা বিশ্বের শিশুদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে থাকেন। তাদের আচরণ (দুষ্টু ও লক্ষ্মী) অনুযায়ী দুই ভাগে ভাগও করেন। তারপর ক্রিসমাস ইভের রাতে তিনি লক্ষ্মী ছেলেমেয়েদের খেলনা, লজেন্স ও অন্যান্য উপহার দেন। আর দুষ্টুদের কয়লা দিয়ে যান।
সান্তাক্লজ নিয়ে বহু বিদেশী উপাখ্যান রয়েছে। রয়েছে কবিতা ও কাহিনী। আর ভারতে সান্তার আবির্ভাব ঘটেছে বিদেশীদের হাত ধরেই। আসল সান্তা অর্থাৎ নিকোলাস হয়ত আর নেই। কিন্তু ছোটদের খুশি করতে আজও বহু সহৃদয় ব্যক্তি সান্তা সেজে ২৪শে ডিসেম্বর রাতে উপহার নিয়ে ঘোরেন। সান্তা তাই শুধুই গল্পের এক চরিত্র নয়। এক উদারতার ভাবমূর্তি হিসেবেই আজও বিশ্ববন্দিত।
Discussion about this post