‘পাতক্ষীরশা’! নামটা কি খুব অচেনা ঠেকছে? অবশ্য তেমন চেনা লাগার কথাও নয়৷ তবে বাংলাদেশের কাছে এটি বেশ ঐতিহ্যবাহী বটে! এটি আসলে একপ্রকার মিষ্টি। অনেকটা আমাদের ক্ষীরের মতই। তবে একটু আলাদা। বাংলাদেশের বিক্রমপুরের জেলার এক বিখ্যাত খাবার এই পাতক্ষীরশা। লোকমুখে শোনা যায়, এই খাবার প্রায় শতবর্ষ পুরনো। বিক্রমপুরে প্রথম পাতক্ষীরশা তৈরি করেন সিরাজদিখান সদরের সন্তোষপাড়া গ্রামের প্রয়াত ইন্দ্রমোহন ঘোষের স্ত্রী রাজলক্ষ্মী ঘোষ। বর্তমানে তাঁদের বংশধর শরৎ ঘোষ, খোকন ঘোষ, যাদব ঘোষ এবং মাধব ঘোষ এখনও এই পেশায় যুক্ত রয়েছেন।
ঠিক কীভাবে বানানো হয় এই পাতক্ষীরশা? বর্তমানে দোকানের দায়িত্ব সামলানো সুনীল ঘোষের স্ত্রী নয়নতারা ঘোষের থেকেই জানা গেল সেই পদ্ধতি। একটি পাতক্ষীরশা বানাতে প্রায় তিন লিটার দুধের প্রয়োজন হয়। একটি বড় পাত্রে দুধ ঢেলে তা অনেকক্ষণ জাল দিতে হয়। জাল দেওয়ার সময় কাঠের তৈরি হাতা বা চামচ দিয়ে নাড়তে হয় যাতে তলায় দুধ না লেগে যায়। এরপর দুধ ঘন হয়ে এলে সামান্য পরিমাণে হলুদ ও চিনি মিশিয়ে উনুন থেকে নামানো হয়। নামানোর পর অন্য একটি মাটির পাত্রে রেখে সেটিকে ঠান্ডা করা হয়। এরপর কলা পাতার মোড়কে তা মুড়িয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয় পাতক্ষীরশা। রাজলক্ষী দেবীর বংশধর খোকন ঘোষের স্ত্রী পারুল ঘোষ দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের দোকানের জন্য বাড়িতে পাতক্ষীরশা ও দই তৈরি করছেন। তিনি বলেন, “প্রথম থেকেই আমাদের বাড়িতে পাতক্ষীরশা বানানো হয়। দোকানের কর্মচারীরা বাড়ি থেকে সেগুলো দোকানে নিয়ে যান।” এছাড়াও কেউ যদি চিনি ছাড়া পাতক্ষীরশা খেতে চান, সে ক্ষেত্রে চিনি মেশানো হয় না।
প্রতিদিন ২০-২৫টির মতো পাতক্ষীরশা তৈরি করেন পারুল দেবী। একটি পাতক্ষীরশার ওজন প্রায় আধা কেজি। দুধের দামের ওপরই এই খাবারের দামের পার্থক্য হয়ে থাকে। একটি পাতক্ষীরশার (স্থানীয়দের ভাষায় এক পাতা) দাম ২৫০ টাকা। তবে কেজি হিসাবে নিলে দাম পড়বে প্রায় ৪৫০ টাকা। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায় শীতের মরশুমেই বেশি বাড়ে এই পাতক্ষীরশার চাহিদা। নবান্নে বিভিন্ন ধরনের পিঠা পুলি তৈরিতেও ব্যবহার করা হয় এটি। এমনকি এও শোনা যায় যে, বিক্রমপুর এবং আশপাশের এলাকার যেসব বাসিন্দা বর্তমানে বিদেশে থাকেন, তাঁরা দেশে ফিরলে পাতক্ষীরশা সঙ্গে করে বিদেশেও নিয়ে যান। সেখানেও নাকি এই খাবারের বেশ ভালোই চাহিদা। অর্থাৎ বিদেশের মানুষও মজেছেন এই খাবারে। ঠিক এমনটাই এর মোহ। আর সেই মোহতেই নিজেদের এখনও জড়িয়ে রেখেছেন বিক্রমপুরের বাসিন্দারা।
কভার চিত্র ঋণ – কামরুল হাসান
Discussion about this post